ধুঁকছে ধনিয়াখালির তাঁত, সংসার চালাতে নাজেহাল অবস্থা শিল্পীদের
আয় নেই। নতুন প্রজন্মের আগ্রহ কম। হারিয়ে যাচ্ছে ধনিয়াখালির ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প।

শুভঙ্কর, হুগলি: হুগলির ধনিয়াখালি। রাজ্যের তাঁত শিল্পের অন্যতম বিখ্যাত নাম। ফুলিয়া শান্তিপুরের পাশাপাশি এখানকার তাঁতেরও গুণগতমান ও ডিজাইন ছিল দেখার মত। তবে সময়ের মারপ্যাঁচে ধনিয়াখালির তাঁত এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। এর পিছনে অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে আসছে নতুন প্রজন্মের অনীহা। সঙ্গে নতুন নতুন ডিজাইনের অভাব। যার ফলে অন্যান্য তাঁতের সঙ্গে লড়াই করতে পারছে না ধনিয়াখালির তাঁত। বাজার হারিয়ে ফেলছে তারা। চাহিদা গিয়ে ঠেকেছে তলানীতে।
আর কিছুদিন পরেই দুর্গাপুজো। এই সময় বস্ত্র শিল্পের চাহিদা থাকে আকাশ ছোঁয়া। তবে কয়েক বছর ধরেই বাজারে ভাটার টান চলছে। ব্যবসায়ীরা এর পিছনে ই-কমার্স সংস্থাগুলোকে দায়ী করে। তবে ধনিয়াখালির তাঁতের বিষয়টা অন্য। এখানকার তাঁত বুনে শিল্পীদের বিশেষ রোজগারই হয় না। শিল্পের সঙ্গে যুক্তদের সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও আগ্রহ হারাচ্ছে তারা। আয় নেই বলে নতুন প্রজন্ম ঝুঁকছে অন্যদিকে। আগে এই শিল্পের সঙ্গে কয়েক হাজার মানুষ যুক্ত থাকলেও এখন তা কমতে কমতে এসে থেকেছে মাত্র শ’দুয়েকে। ধনিয়াখালিতে সোমসপুর ইউনিয়ন তাঁত সমবায় ও ধনিয়াখালি ইউনিয়ন তাঁত সমবায় নামে দুটি সমবায় রয়েছে। এই দুই সমবায়ের মাধ্যমে তাঁতিরা তাঁত বোনার জন্য সুতো নিয়ে যান। বোনা সম্পন্ন হলে শাড়ি দিয়ে যান এই সমবায়তেই। এখান থেকেই তাদের পারিশ্রমিক মেলে। এক একটি শাড়ি বুনতে তিন থেকে চার দিন সময় লাগে। অন্যদিকে ডিজাইনে কোনও নতুনত্ব নেই তাই মিলছে না ক্রেতা। সবমিলে সাঁড়াশি চাপে পড়েছে এই শিল্প।
সরকারিভাবে শিল্পীদের তাঁত, ঘর ও ট্রেনিং দিয়ে নানান ভাবে সাহায্য করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা গোড়াতে। অনেকে চাইছেন নতুন ডিজাইন। তা নেই ধনিয়াখালীর তাঁত শিল্পীদের কাছে। এখন শুধুমাত্র শান্তিপুরে জাকাত মেশিনে শাড়ি তৈরি হয়। যাতে নতুন নতুন ডিজাইন করা সম্ভব। এই বিষয়ে তাঁত শিল্পী অশোক বর জানান, ধনিয়াখালি তাঁত শিল্পীদের পরিস্থিতি ভালো নয়। যে পারিশ্রমিক আমরা পাই তা দিয়ে সংসার চালানো খুব মুশকিল হয়ে পরে। সমবায়ের মাধ্যমে আমরা সুতো পাই। সেখান থেকে আমরা তাঁত বুনি। তবে আয় খুব কম। আর এক তাঁত শিল্পী সুশান্ত ভর বলেন, “ সারাদিন কাজ করার পর আমরা ৭০-৮০ টাকা রোজগার করতে পারি। বাজারে যেভাবে জিনিসপত্রর দাম বাড়ছে, সুতোর দাম বেড়েছে সেই অনুযায়ী আমরা পারিশ্রমিক পাই না। বালুচোরি শাড়ি তৈরি করতে গেলে শান্তিপুরের মেশিন ছাড়া হবে না। সেই মেশিন নষ্ট হলে সারাতে গেলে সেখানেই যেতে হবে। এর ফলে অতিরিক্ত অর্থ ও সময় নষ্ট হয়। আমাদের সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে”। সোমসপুর ইউনিয়ন সমবায়ের ম্যানেজার বিনয় ভূষণ লাহা বলেন, “আগে এই তাঁত শিল্প সঙ্গে অনেকেই যুক্ত ছিলেন। একটা শাড়ি তৈরি করতে দুই দিনের কাছাকাছি সময় লাগে। যার ফলে শিল্পীর পারিশ্রমিক ২৫ থেকে ৩০ টাকায় নেমে আসছে। এই শিল্পের প্রতি কেউই আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বাজারে কটনের শাড়ির চাহিদা রয়েছে। কিন্তু লোক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ধুঁকছে ধনিয়াখালির তাঁত শিল্প। এরকম চলতে থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে পড়বে”।