Lal Bahadur Shastri : ৫৬ বছরের মৃত্যু রহস্য, অভিযোগের তীর আজও আমেরিকার দিকে

মৃত্যুর ৫৬টা বছর কেটে গেলেও মানুষের মন থেকে কাটেনি রহস্যের মেঘ। এক সরল জীবনযাপন ও উচ্চ চিন্তা ধারার প্রতীক হিসাবে মানুষের মনে চিরকালের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী( Lal Bahadur Shastri )। তাঁর মৃত্যু রহস্য নিয়ে মানুষের মনে এখনও রয়েছে একাধিক প্রশ্ন। এখনও সেই রাতের আকাশে এক গভীর ষড়যন্ত্রের কালো মেঘকেই দেখতে পায় মানুষ।
সালটা ১৯৬৬। তার আগের বছরই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ( India-Pakistan War ) শেষ হয়। যুদ্ধ শেষের পর পালা শান্তি চুক্তির( Peace Treaty ) আর সেই সূত্রেই পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আয়ুব খান ও ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী গিয়েছিলেন তাসখন্ডে। সেখানেই তিনি বৈঠক করেন। বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা পরেই দেশে আসে তাঁর মৃত্যুর খবর। মৃত্যুর কারণ হিসাবে জানা যায়, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বন্ধের জেরেই এই দুর্ঘটনা। কিন্তু এই কারণ যেন সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয় শাস্ত্রী পরিবারের মন।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শরীর জুড়ে মেলে নীল ও সাদা দাগ, পেটে ও ঘাড়ের কাছে দেখা যায় কাটা চিহ্ন। তাঁর অসুস্থ হয়ে পড়ার পর কোনও ডাক্তারের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। সংসদের লাইব্রেরীতে দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী মৃত্যুর কোনও রেকর্ড নেই। তাঁর মৃত্যু সংক্রান্ত নেই কোনও তথ্য। ফলত একাধিক প্রশ্নের জাল তৈরি হয় লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুকে ঘিরে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট –
লাল বাহাদুর শাস্ত্রী মৃত্যু রহস্য ঘিরে দেশ জুড়েই তৈরি হয়েছিল একাধিক প্রশ্ন চিহ্ন। তাঁর গোটা শরীর জুড়ে দেখা যায় নীল ও সাদা দাগ, যা তাঁর পরিবার বিষক্রিয়ার দাগ বলে দাবি করেন। এছাড়াও, বিদেশে ময়নাতদন্ত হয়নি তারপরও শরীরে রয়েছে কাটা চিহ্ন। এছাড়াও, শাস্ত্রী পরিবারের ব্যাক্তিগত ডাক্তার আরএন চুগ দাবি করেন, শাস্ত্রীজির শরীর যথেষ্ট সুস্থ ছিল। তাঁর হৃদ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনও লক্ষণই নেই।
Lal bahadur Shastri’s সাক্ষীদের মৃত্যু –
সাল ১৯৭৭। সংসদীয় সংস্থার সামনে সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত থাকার কথা হয়েছিল লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর ভৃত্য রাম নাথ ও ব্যাক্তিগত ডাক্তার আরএন চুগের। দুজনেই সেই বিদেশ সফরে শাস্ত্রীজির সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু, সংস্থার সামনে উপস্থিত হওয়ার আগেই মৃত্যু হয় সেই দুই সাক্ষীর। এক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁদের। একইসঙ্গে মৃত্যু হয় শাস্ত্রীজির দুই ছেলে ও দুই স্ত্রী’র। এই মৃত্যুগুলি গভীর ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন শাস্ত্রীজির ঘনিষ্টরা।
অভিযোগ তীর CIA-এর দিকে –
শাস্ত্রীজির মৃত্যু রহস্য দুনিয়া জুড়েই সৃষ্টি করেছিল এক প্রশ্ন চিহ্নের। এক গভীর ষড়যন্ত্রেরই যে শিকার ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদূর শাস্ত্রী, তা অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করে দিয়েছিল। এমতাবস্থায়, একটি তথ্য হতবাক করে বিশ্ববাসীকে। শাস্ত্রী মৃত্যুর অভিযোগের তীর যায় আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ( CIA )- এর দিকে। সাংবাদিক গ্রেগরি ডাগলাস, রবার্ট ক্রাউলি, সেন্ট্রাল ক্রাউলি, সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির এজেন্টের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে নিশ্চিত করেছেন যে লাল বাহাদূর শাস্ত্রী এমনকি ডক্টর হোমি ভাবার মৃত্যুর পিছনেও আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-এর হাত রয়েছে। ভারত একটি সংস্কার মুখী রাষ্ট্র হিসাবেই আত্মপ্রকাশ করার চেষ্টা করেছিল লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর হাত ধরেই। পাশাপাশি, পারমাণবিক ফ্রন্টেও ভারত-রাশিয়ার আধিপত্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি হুমকি হিসেবে দেখছিল। তারই অবসান ঘটাতে শাস্ত্রীজির হত্যার পরিকল্পনা করে আমেরিকা।
RTI-এর প্রতিক্রিয়া –
লেখক অনুজ ধর লাল বাহাদুর শাস্ত্রী-র মৃত্যু নিয়ে একটি আরটিআই দায়ের করেন। আরটিআই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় তরফে জানানো হয়, নথি প্রকাশ পেলে ভারতের বিদেশনীতির পক্ষে তা ক্ষতিকর। তাই মৃত্যু সংক্রান্ত নথি প্রকাশ করা যাবে না।