Lata Mangeshkar : ‘রাষ্ট্রের মেয়ে’ চলে গেলেন, একঝলকে তার জীবনভরের সম্মান

রাখী পোদ্দার, কলকাতা : সারা দেশ জুড়ে চলছে সরস্বতী বন্দনা। আর এই আবহেই নক্ষত্র পতন হল সঙ্গীত জগতের সরস্বতীর। প্রয়াত লতা মঙ্গেশকর ( Lata Mangeshkar)। প্রায় চার সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। সম্প্রতি অবস্থার উন্নতিও হচ্ছিল বলে জানা যায়। কিন্তু শনিবার আচমকা তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। তাকে দিতে হয় ভেন্টিলেশনে ( Ventilation) সেখান থেকে আর ফেরানো যায়নি লতাকে। ৯২ বছর বয়সে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি। রবিবার সকালে মুম্বাইয়ের ( Mumbai) ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতাল ( Breach Candy Hospital) থেকে জানানো হয় এই দুঃসংবাদ। করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় গত ১১ই জানুয়ারি তাঁকে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। নিউমোনিয়াতেও ( Pneumonia) আক্রান্ত ছিলেন তিনি। প্রথম থেকেই তাঁকে রাখা হয়েছিল আইসিইউ-তে। ৩০শে জানুয়ারি শিল্পীর কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট আসলেও, বয়সজনিত নানা সমস্যার কারণে শেষ পর্যন্ত আর লড়াইয়ে বিজয়ী হয়ে আসা হল না তাঁর। আজ সারা ভারত শোকাহত। তাঁর অনবদ্য এই কর্মের জন্য সারা বিশ্ব তাঁকে মনে রাখবেন সারাজীবন।
Lata Mangeshkar : “ভারতের নাইটিঙ্গেল”
ভারতের এই কোকিলকন্ঠী “ভারতের নাইটিঙ্গেল” নামেও পরিচিত। ১৯২৯ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর লতার জন্ম হয় ইন্দোরে এক মারাঠি পরিবারে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারান তিনি। অবশ্য তার আগেই বাবার হাত ধরে অভিনয় এবং গান শিখতে শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। ১৩-১৪ বছর বয়সেই প্রথম বার মরাঠি ( Marathi) সিনেমায় গান গাওয়া শুরু। এরপর ১৯৪৮ সালে “মজবুর” ছবিতে প্রথম হিন্দি গান গেয়েছিলেন তিনি। আট দশকের দীর্ঘ কেরিয়ারে ত্রিশ হাজারের বেশি গান রেকর্ড করেছেন তিনি। তিনি এক হাজারেরও বেশি হিন্দি এবং ৩৬টি ( 36) আঞ্চলিক ছবিতে ৫০০০ টিরও বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। বছরের পর বছর ধরে, মধুবালা ( Madhubala) থেকে শুরু করে মাধুরী দিক্ষিত ( Madhuri Dixit) সব প্রজন্মের অভিনেত্রীদের জন্য কণ্ঠ দিয়েছেন সুরসম্রাজ্ঞী।
Lata Mangeshkar : পুরস্কার এবং স্বীকৃতি -লতা
মঙ্গেশকর ( Lata Mangeshkar) তাঁর আট দশকের দীর্ঘ কর্মজীবনে বেশ কয়েকটি পুরস্কার এবং স্বীকৃতি পেয়েছেন। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে ( Royal Albert Hall) পারফর্ম করেন। তিনি তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ( National Film Awards), ১৫টি বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার ( Bengal Film Journalists’ Association Awards), চারটি ফিল্মফেয়ার সেরা মহিলা প্লেব্যাক পুরস্কার ( Filmfare Best Female Playback Awards), দুটি ফিল্মফেয়ার বিশেষ পুরস্কার ( Filmfare Special Awards), ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডের ( Filmfare Lifetime Achievement Award) মতোন আরও বহু পুরস্কার এবং স্বীকৃতি অর্জন করেন। এছাড়াও লতা মঙ্গেশকর ১৯৮৯ সালে দাদাসাহেব ফালকে ( Dadasaheb Phalke Award) পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০০১ সালে, তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ভারতরত্ন ( Bharat Ratna) লাভ করেন এবং ২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাকে তার সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ( Officer of the Legion of Honour) প্রদান করে। এগুলির সাথে, লতা মঙ্গেশকর ১৯৭৪ সালে গিনেস রেকর্ডে ( Guinness Record) ভারতীয় সঙ্গীতের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রেকর্ডকৃত শিল্পী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ভারত সরকার তাঁকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁর ৯০তম জন্মদিনে জাতির কন্যা পুরস্কারে ( Daughter of the Nation award) সম্মানিত করেন। হিন্দি সঙ্গীতের রানী হিসাবে তার জীবনের গল্প, সংগ্রাম, সাফল্য এবং তার রাজত্বের সব বিজয়গাথা রয়ে যাবে তার গানের সুরে, ‘ইয়ে দিল তুম বিন কাহি লাগতা নেহি, হাম ক্যা কারে’।
আরও পড়ুন : Lata Mangeshkar : সুরের সমাপ্তি, ৯২ বছরে প্রয়াত বর্ষীয়ান সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর