দেশে কমছে ডাক্তারের সংখ্যা, স্বাস্থ্য খাতে ঘোর বিপদের আশঙ্কা করছে চিকিৎসক মহল

রাজকুমার মণ্ডল, কলকাতা : ভারতে ডাক্তারের ঘনত্ব (‌ Doctor density )‌ প্রতি দশ হাজার জনে মাত্র ৫ জন। চিকিৎসা শিক্ষা এবং মানব সম্পদে কম সরকারী বিনিয়োগ এমবিবিএস পড়ুয়াদের আন্তর্জাতিক অভিবাসনের মূলে দাঁড়িয়েছে, অচিরেই যা ইউক্রেন সংকটে প্রতিফলিত। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সক্রিয় মানব সম্পদের উপর একটি সমীক্ষায় প্রকাশ, প্রতি ১০ হাজার জনে নামমাত্র অর্থাৎ ৬.‌১ জন ডাক্তারের ঘনত্ব রয়েছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসা যোগ্যতার জন্য দায়ী হলে এটি আরও ৫-এ নেমে আসে। নার্সের ঘনত্ব একইভাবে কম। প্রতি ১০ হাজারে অত্যন্ত কম। স্বাস্থ্য মানব সম্পদের উপরোক্ত স্টক ঘনত্ব প্রতি ১০ হাজার জনে ৪৪ জন, হু-‌র দেওয়া পরিসংখানের তুলনায় আশ্চর্যজনকভাবে কম। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথ-এর (‌ Doctor density )‌ অনুপকরণের নেতৃত্বে এই গবেষণায় দুটি সরকারি ডাটাবেস পরীক্ষা করা হয়েছে। জাতীয় স্বাস্থ্য কর্মশক্তি অ্যাকাউন্ট(ডাক্তার, নার্স ইত্যাদির সামগ্রিক রেজিস্ট্রি) এবং ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস থেকে(যা সক্রিয় কর্মশক্তির মূল্যায়ন করে)। গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তার (১.‌১৬ মিলিয়ন), নার্স/মিডওয়াইফস (২.‌৩৪ মিলিয়ন), ফার্মাসিস্ট (১.‌২০ মিলিয়ন), ডেন্টিস্ট (০.‌২৭ মিলিয়ন) এবং ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সক (০.২‌৭ মিলিয়ন) সহ মোট ৫.‌৭৬ মিলিয়ন স্বাস্থ্যকর্মীর স্টক আয়ুষ,০.‌৭ মিলিয়ন)।“তবে, অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তার এবং নার্স/মিডওয়াইফদের আনুমানিক প্রায় ০.‌৮০ মিলিয়ন এবং ১.‌৪০ মিলিয়নের সাথে আনুমানিক সক্রিয় কর্মশক্তির পরিধি অনেক কম (৩.‌১২ মিলিয়ন)।Doctor density

এই অনুমানগুলি প্রতি ১০ হাজার জনসংখ্যার ৪৪.‌৫জন ডাক্তার, নার্স এবং মিডওয়াইফের ডব্লিউএইচও থ্রেশহোল্ডের অনেক নীচে, পরিসংখ্যান অমুযায়ী। সক্রিয় স্বাস্থ্যকর্মীদের (‌ Doctor density )‌ সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ভারতকে মানব সম্পদে বিনিয়োগ করতে হবে এবং পেশাদার কলেজ এবং প্রযুক্তিগত শিক্ষায় বিনিয়োগের প্রয়োজন এমন দক্ষতা-মিশ্রণের উন্নতি প্রয়োজন। এছাড়াও যারা ইতিমধ্যে কর্মরত, কিন্তু অপর্যাপ্ত যোগ্য তাদের জন্য অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা তৈরির মাধ্যমে যোগ্য স্বাস্থ্য পেশাদারদের শ্রম বাজারে যোগদানের জন্য উৎসাহ প্রদানের অনুপ করণ লিপিবদ্ধকরন করা সম্ভব। কে শ্রীনাথ রেড্ডি, ন্যাশনাল বোর্ড অফ এডুকেশনের প্রাক্তন সভাপতি, যা বিদেশী মেডিকেল স্নাতক পরীক্ষা পরিচালনা করে, বলেছেন যে ইউক্রেনে প্রতিফলিত বর্তমান সংকটের মূলে ছিল চিকিৎসা শিক্ষায় দুর্বল বিনিয়োগ। রেড্ডি বলেন, তাৎক্ষণিক সমাধান হল, সমস্ত জেলা হাসপাতালকে বর্ধিত আসন সহ মেডিক্যাল কলেজে উন্নীত করা, যা তিনি ২০১১ সালে পরিকল্পনা কমিশনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উচ্চ-স্তরের ওয়ার্কিং গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসাবে সুপারিশ করেছিলেন।

ইউক্রেনের শিক্ষা এবং বিজ্ঞান মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, ১৮ হাজার ৯৫ জন ভারতীয় পড়ুয়ারা বর্তমানে সে দেশে রয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই এমবিবিএস পড়তে গিয়েছেন। জলন্ধরের এক শিক্ষা পরামর্শবিদ জানিয়েছেন ভারতের মতো এত প্রতিযোগিতা নেই ইউক্রেনে। ফলে সেখানে চিকিৎসাবিজ্ঞান খুব সহজেই পড়া যায়। বাইরের ডিগ্রি থাকলে তার গুরুত্ব বেশি হয়। ফলে পরবর্তী পড়াশুনোর ক্ষেত্রে তা লাভদায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও ইন্ডিয়ান মেডিকেল (‌ Doctor density )‌ কাউন্সিল, ওয়ার্ল্ড হেলথ কাউন্সিল -প্রতিষ্ঠানগুলি ইউক্রেনের এই এমবিবিএস ডিগ্রিকে মান্যতা দেয়। আরও একটি কারণ হল-কম খরচ। ভারতে আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে ডাক্তারি পড়তে ৫ বছরে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা খরচ হয়৷ বেসরকারিতে তা প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। আর সরকারি হলে বছরে ২ লক্ষ। কিন্তু প্রতিযোগিতা অত্যন্ত কঠিন। সকলে সুযোগ পায় না। আর ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে লাগে ৪-৫ লক্ষ টাকা। যা প্রায় তিনগুণ কম।

আরো পড়ুন‌ বিরাট ডেটিং রহস্য ফাঁস, ছয় সুন্দরী ব্যাচেলর কোহলির জীবনে

যদিও অনেকেই বলেছেন যে এমবিবিএস (‌ Doctor density )‌ আসন সংখ্যা ভারতে যথেষ্ট রয়েছে। তা ছেড়ে ইউক্রেনে কেন যান পড়ুয়ারা তা যথেষ্ট স্পষ্ট নয়। ফরিদাবাদ হেলথ সায়েন্সের এক আধিকারিকের কথায় ভারতে যারা সুযোগ না পান তারাই ইউক্রেনে যান এমবিবিএস করতে। ভারতে থাকলে National Eligibility cum Entrance Test (NEET)  পরীক্ষা এবং অত্যন্ত ভাল রেজাল্ট ছাড়া এমবিবিএস সম্ভব নয়৷ আর সেখানে ইউক্রেনে পড়তে গেলে নিট পরীক্ষায় একবার পাস করলেই হবে৷ পড়ুয়াদের মতে ইউক্রেনে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিকাঠামো যথেষ্ট উন্নত। বিশ্বজুড়েই ডিগ্রিকে মান্যতা দেওয়া হয়৷




Leave a Reply

Back to top button