২ টাকার ওষুধ ১২টাকা! মূল্যবৃদ্ধির নামে কোটি টাকার চুরি, নেপথ্যে কে?

অহেলিকা দও, কলকাতা : সরকারি ভান্ডারে নাকি অর্থের সংকট! লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকাও জোগানো হচ্ছে না ঠিকমতো। আর এরই মধ্যে স্বাস্থ্য ভবনের ( health department ) বিরুদ্ধে উঠে এল অভিযোগ। সামনে এল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। চড়া দরে ওষুধ কিনে কার্যত নষ্ট করা হয়েছে রাজ্য সরকারের টাকা। ট্যাবলেট পিছু ২ টাকা দরে যে ওষুধ কেনা যেত সেই ওষুধই দিনের পর দিন ১২ টাকারও বেশি দামে কিনে নেওয়া হয়েছে। আর এই পুরো প্রক্রিয়ার রাজ্যের কোষাগারে ( health department ) প্রায় ৫০ কোটি টাকা লুঠ হয়েছে বলে অভিযোগ। কার গাফিলতিতে দিনের পর দিন এভাবে মানুষের করের টাকা নষ্ট হল, তা নিয়ে উঠেছে নানান প্রশ্ন।
এছাড়াও, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এভাবে নিয়ম বহির্ভূত চড়া দরে ডায়াবেটিসের ওষুধ কেনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে স্বাস্থ্য ভবন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, একটি ওষুধের জেনেরিক প্রোডাক্ট না বেরনোয় প্রতি ট্যাবলেট ১২ টাকা ৪৩ পয়সা দরে কিনেছিল সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর যা জেনেরিক ঔষধের দামের তুলনায় বেশি। পরে সংশ্লিষ্ট ওষুধের জেনেরিক প্রোডাক্ট বাজারে এসে যাওয়ার পরও সেই ১২ টাকা ৪৩ পয়সা দরে কেনা হয়েছিল ঔষধ। ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে ওই ওষুধের প্রোপাইটরি পিরিয়ড। অর্থাৎ তারপর থেকেই কম দামে ওষুধ কেনার কথা। তা সত্বেও কেনা হয়নি কম দামে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত ১২ টাকা ৪৩ পয়সা দরে ডায়াবেটিসের ঔষধটি কিনেছে স্বাস্থ্য ভবন ( health department )। যার ফলে সরকারের ঘর থেকে অতিরিক্ত প্রায় ৫০ কোটি টাকা বেরিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। ২৯১২ সালের শেষে বিষয়টি নজরে আসার পরে সবকটি মেডিকেল কলেজের এমএসভিপি, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিকে স্টপ পেমেন্ট করতে বলা হয়।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে ২৮ কোটি ৬১ লক্ষ ৮০ হাজার ৫৭৩ টাকার ঔষধ কেনা হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ২০ কোটি ৭৪ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৪৯ টাকার ওষুধ কেনা হয়। মোট খরচের পরিমাণ ৪৯ কোটি ৩৬ লক্ষ ৬৩ হাজার ৯২৩ টাকা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রোপাইটরি পিরিয়ড শেষ হওয়ায় প্রতি ট্যাবলেট ২ টাকা দরে কিনতে সরকারের খরচ পড়ার কথা ৩৮ লক্ষ টাকা। সেই জায়গায় সাড়ে ২৮ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।
জেনেটিক ওষুধের দরে যেখানে ৩ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা খরচ করলেই হত, সেখানে খরচ হয়েছে ২০ কোটি ৭৪ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৪৯ টাকা। প্রশ্ন উঠেছে, দফতরের কর্তাব্যক্তিদের উদাসীনতায় এই ঘটনা? নাকি জেনে বুঝে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে মুনাফা লুঠের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে? এর পেছনে কারা জড়িত? তাদের বিরুদ্ধে ( health department ) কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
প্রত্যেক ওষুধের একটি জেনেরিক প্রোডাক্ট থাকে সেই প্রোডাক্টটি বাজারে বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি করে। আর সরকারি ( health department ) সংস্থার থেকেই ওষুধ কেনে যারা জেনেরিক প্রোডাক্ট সবচেয়ে কম দামে দেয়। আর যদি জেনেরিক প্রোডাক্ট না থাকে তাহলে অপেক্ষাকৃত চড়া দামে কিনতে হয় ওষুধ। সেই সময়কে বলা হয় প্রোপাইটরি পিরিয়ড। আর সেই সময় শেষ হলে সরকার কম দামে ওষুধ কেনে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থার উচিত স্বাস্থ্য দপ্তরে জানানো আবার স্বাস্থ্য দপ্তরেরও দায়িত্ব সেদিকে নজর রাখা।
আরও পড়ুন…টাকার বিনিময়ে টেলিপাড়ায় মিলছে কাজ! বিস্ফোরক ঘটনায় নাম জোড়ালো কাদের?
স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী এই প্রসঙ্গে বলেন, “এটা সংশ্লিষ্ট বিভাগের তরফে তদন্ত করা হচ্ছে। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” পুরো বিষয়টা খতিয়ে দেখেই ব্যবস্থা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। একদিকে যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গিয়েছে যে জনমুখী প্রকল্পের টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রাজ্যকে। তারই মধ্যে এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে দপ্তরের ভূমিকা নিয়ে।
এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক সংগঠনের নেতা মানস গুমটা বলেন, একদিকে যখন টাকার অভাব, সেখানে জীবনদায়ী ওষুধ নিয়ে যদি এরকম ঘটনা ঘটে তাহলে তো অবশ্যই উদ্বেগের। এখন যা পরিস্থিতি তাতে নানান জায়গা থেকে বেনিয়মের অভিযোগ সামনে আসছে। এই ঘটনার যথাযোগ্য তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন…মৃত্যুর পরও অটুট মায়ের প্রতি ভালোবাসা! ডায়েরির শেষ পাতায় এখনও জ্বলজ্বলে নামটা