Farm Law Repealed- বিল-বিতর্ক-জয়-পরাজয় মিলিয়ে কেটে গেছে ১৮টা মাস, ফিরে দেখা প্রতিবাদী মুহূর্ত

সাল ২০২০, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকার প্রণয়ন করলো তিন কৃষি আইনের।  এই তিন কৃষি আইন হল যথাক্রমে – ১) কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যে ব্যবসা ও বাণিজ্য সংক্রান্ত আইন, ২) অত্যাবশ্যক পণ্য আইন এবং ৩) কৃষি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ এবং কৃষি পরিষেবা সংক্রান্ত কৃষক চুক্তি আইন।  এই তিন কৃষি আইন প্রণয়নের পর সেগুলির বিরোধিতা করে তীব্র প্রতিবাদ জানান ভারতের কৃষকেরা।

কৃষকদের যুক্তি ছিল, প্রধানমন্ত্রী যদিও বলছেন এই কৃষি আইন কৃষকদের হাত শক্ত করবে, কিন্তু আদতে দেশের কৃষকদের মেরুদন্ড ভেঙে দেবে এই আইন। বিশেষ করে প্রান্তিক ও ছোট কৃষকেরা মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে আরও বেশি শোষিত হবেন। কৃষকদের এই দাবি সমর্থন করেন বিরোধীরাও। আর সূত্রপাত ঘটে কৃষি আইনের।

কীভাবে তৈরি হল এই কৃষি আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, কীভাবেই বা আন্দোলন থেকে এলো সাফল্য, দেখে নিন একনজরে-

৫ই জুন, ২০২০- তিনটি নতুন কৃষি আইনের প্রস্তাব আনল কেন্দ্র। তিনটি বিল, যা কেন্দ্রের আয়ত্তাধীন কৃষি ক্ষেত্রকে টেনে আনবে বেসরকারি আওতায়।

১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২০-  পার্লামেন্টে আনা হল অধ্যাদেশ।

১৭ই সেপ্টেম্বর- লোকসভায় পাস হল অধ্যাদেশ।

২০ সেপ্টেম্বর- রাজ্যসভায় ধ্বনি ভোটে পাস হয়ে গেল কৃষি বিল।

২৪ সেপ্টেম্বর- কৃষি বিলের প্রতিবাদে কৃষকরা তিন দিনের ‘রেল রোকো’ ঘোষণা করলেন।

২৫ সেপ্টেম্বর- গোটা দেশের কৃষকেরা রাস্তায় বিক্ষোভে নামলেন। আন্দোলনের ডাক দিল অল ইন্ডিয়া কিসান সংঘর্ষ কো অর্ডিনেশন কমিটি।

Farm Law,Farm Laws,Farm Bills,BJP Government,PM Narendra Modi,Farmers Protest,Farmer,Government of India,কৃষক আন্দোলন,নরেন্দ্র মোদী,দেশ,কৃষি বিল,বাংলা খবর,কৃষি আইন,খবর,কৃষি বিল প্রত্যাহার,কৃষক
ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে, গুরুজয়ন্তীর দিন প্রত্যাহার তিন বিতর্কিত কৃষি বিলের

২৭ সেপ্টেম্বর- রাষ্ট্রপতি অনুমোদন পেয়ে কৃষি বিল পরিণত হল কৃষি আইনে।

২৫ নভেম্বর- দেশ জুড়ে বিক্ষোভের কন্ঠ। দিল্লি অভিযানের ডাক দিল পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকেরা। করোনা অজুহাতে রাজধানী প্রবেশ নিষেধ করলো দিল্লি পুলিশ। কিন্তু কৃষকদের জেদকে রুখতে পারলো না তারা। দেশের কৃষকদের আটকাতে লক্ষ্য করে ছোড়া হল জলকামান, কাঁদানে গ্যাস।

২৮ নভেম্বর- কৃষকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু তার প্রস্তাব প্রত্যাখান করে কৃষকেরা। পরের দিনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে বলেন, “কৃষকদের যারা উস্কানি দিচ্ছেন, তারা কৃষকদের জন্য কিছু করেননি। তাঁর সরকারই কৃষকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করেছে।”

৩ ডিসেম্বর- প্রথম বৈঠকে মুখোমুখি কৃষক ও কেন্দ্র। পরেরদিনই দ্বিতীয় বৈঠক, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এলো না কোনো সুরাহা।

৮ ডিসেম্বর- ভারত বন্ধের ডাক দিল কৃষকেরা।

৯ ডিসেম্বর- কৃষি আইন সংশোধনের প্রস্তাব ফেরালেন কৃষকেরা।

১১ ডিসেম্বর- কৃষি আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেল ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন।

৪ জানুয়ারি, ২০২১- সরকারের সঙ্গে কৃষকদের সপ্তম দফার বৈঠকও ব্যর্থ।

১২ জানুয়ারি- তিন কৃষি আইন বলবৎ করায় স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। গঠন করা হল চার সদস্যের কমিটি। যা দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে সমাধান বের করার চেষ্টা করবে।

২৬ জানুয়ারি- কৃষি আইন প্রত্যাখানের দাবিতে ট্রাক্টর মিছিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ। সিঙ্ঘু ও গাজীপুর সীমান্ত থেকে পথ বদলে দিল্লি কেন্দ্রে প্রবেশ। লাল কেল্লার দেওয়াল বেয়ে উঠে বিক্ষোভকারীদের একাংশ জাতীয় পতাকা নামিয়ে নিশান সাহিবের পতাকা উত্তোলন করে। পুলিশ লাঠি ও কাঁদানে গ্যাস চালায়। এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুও হয় সংঘর্ষে।

Rakesh Tikait on Modi repealing Faarm Law
FARM LAW REPEALED – মুখের কথায় নেই ভরসা, সংসদ থেকে বাতিল না হওয়া পর্যন্ত ফিরতে নারাজ কৃষকরা

৪ ফেব্রুয়ারি- কৃষকদের সমর্থনে কথা বলার জন্য দেশে খ্যাতনামী ও বিদ্বজ্জনদের নিন্দা করলো মোদী সরকার। বলা হল, তাঁর সঠিক জিনিস না জেনেই দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করছেন। আমেরিকার পপ তারকা রিহানা, পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের বোনঝি মীনা হ্যারিসেরও সমালোচনা করা হল।

১৪ ফেব্রুয়ারি- ২১ বছর বয়সী দিশা রবিকে গ্রেফতার করলো কেন্দ্র সরকার। গ্রেটা থুনবার্গের কৃষক আন্দোলন সংক্রান্ত টুলকিট সম্পাদনার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে।

২৭ মে- পূর্ণ হল আন্দোলনের ৬ মাস। সেই দিনটিকে কালা দিবস হিসাবে পালন করলো কৃষকেরা। ভারতীয় কৃষক ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকাইত জানিয়ে দিলেন, দরকার হলে ২০২৪ সালে মোদী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত চলবে আন্দোলন।

জুলাই, ২০২১- সংসদে শুরু বাদল অধিবেশন। পাশাপাশি, ২০০ জন কৃষক সংসদের বাইরে কৃষক সংসদ বসালেন। সেখানেও শুরু হল সমান্তরাল বাদল অধিবেশন। সংসদ চত্বরে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির সামনে বিক্ষোভ করলেন বিরোধী দলে সদস্যরা।

৭ আগস্ট- দেশের ১৪টি বিরোধী দলের নেতা দিল্লির যন্তর মন্তরে কৃষক সংসদের বাদল অধিবেশন যোগ দান করলেন। রাহুল গান্ধী জানালেন, তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে সমস্ত বিরোধী দল একজোট হয়ে কৃষকদের পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

২৮ আগস্ট- কার্নালে কৃষকদের উপর লাঠি চালালো হরিয়ানার পুলিশ। রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিজেপির একটি বৈঠক নিয়ে বাস্তারায় জাতীয় সড়কের উপর বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কৃষক আন্দোলনকারীরা। পুলিশের লাঠির আঘাতে জখম হল বহু কৃষক। প্রতিবাদে আইএএস কর্তা আয়ুষ সিংহের সাসপেনশন দাবি করলেন কৃষকেরা। ক্যামেরায় আয়ুষকে বলতে শোনা গিয়েছিল, যেন কোনো কৃষক ফাটা মাথা ছাড়া ঘেরাটোপের বাইরে বার হতে না পারে।

আরও পড়ুন……Farm Laws Repealed- এটা একটা জিহাদি জাতি’র জয়, কৃষি আইন প্রত্যাহার নিয়ে বললেন কঙ্গনা

৩ অক্টোবর-  উত্তরপ্রদেশের লখিমপুরের খেরিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলের দ্রুতগামী গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল চার কৃষকের। কৃষকেরা ওই এলাকায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। ঘটনার পর অজয়ের ছেলে আশিস মিশ্রর গাড়ি পুড়িয়ে দেন কৃষকেরা।

১০ অক্টোবর-  লখিমপুর ঘটনায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলের ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ।

১৯ নভেম্বর- কৃষক আন্দোলনের চাপে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নতি স্বীকার। পাশাপাশি, তিন বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার।




Back to top button