শ্রীলঙ্কার হাতে কাচাথিভু দ্বীপ তুলে দিয়েছিলেন ইন্দিরা, ‘এই ভূমি ভারতমাতার অংশ নয়’? প্রশ্ন মোদীর

‘ভারতমাতাকে ভেঙে টুকরো করার’ অভিযোগের এটাই মোদীর তরফের জবাব।

মণিপুর ইস্যুতে উত্তাল সংসদ। অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে বিরোধীরা। বাদল অধিবেশন জুড়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ শানিয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ ‘ইন্ডিয়া’ জোট। মোদীর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে চোখা চোখা বাক্যবাণ। এমনকী কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘ভারতমাতাকে ভেঙে টুকরো করা’র অভিযোগও করেছেন রাহুল গান্ধী।

বাদল অধিবেশন শেষ হওয়ার আগের দিন, অনাস্থা প্রস্তাবের জবাবি ভাষণে সেই আক্রমণের পাল্টা দিয়েছেন মোদী। সেই সময়েই তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে কাচাথিভু-র কথা। ‘ভারতমাতাকে ভেঙে টুকরো করার’ অভিযোগের এটাই ছিল মোদীর তরফের জবাব। ১৯৭৪ সালে এই দ্বীপ শ্রীলঙ্কাকে দিয়ে দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

প্রায় পাঁচ দশকের পুরনো ইতিহাস। কিন্তু মোদী মুখে কাচাথিভুর কথা শুনে সেই পুরনো ইতিহাসেরই পাতা ওলটাতে চাইছেন সাধারণ মানুষ। জানতে চাইছেন কাচাথিভু দ্বীপ কোথায়? কী হয়েছিল এই দ্বীপের সঙ্গে? কেনই বা হাতছাড়া হয়?

কাচাথিভু ভারত ও শ্রীলঙ্কার মাঝে অবস্থিত একটি দ্বীপ। একসময় এই দ্বীপ ছিল ভারতের অন্তর্ভুক্ত। ১.৬ কিমি দৈর্ঘ। চওড়ায় ৩০০ মিটার। ভারতীয় উপকূল থেকে মাত্র ৩৩ কিমি দূরে অবস্থিত। জাফনা থেকে দূরত্ব ৬২ কিমি। রামেশ্বরমের উত্তর-পূর্ব দিকে। জনমানবহীন দ্বীপ। তবে ভারতীয় মৎস্যজীবীরা এই দ্বীপে মাছ ধরতে যেতেন।

Narendra Modi,India,Sri lanka,Katchatheevu,Indira Gandhi,Tamilnadu,Congress,Rahul Gandhi

ব্রিটিশদের এক প্রতিনিধি দল দাবি করে, এই দ্বীপ রামনাদ রাজাদের মালিকানাধীন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কাচাথিভুকে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অধীনে এনে রাজত্ব শুরু করে। ১৯২১ সালে মৎস্যজীবীদের জন্য জলসীমা নির্ধারণ শুরু হয়। তখন ভারত ও শ্রীলঙ্কা দুই দেশই কাচাথিভুর উপর নিজেদের অধিকার দাবি করে। এই বিবাদ চলে ১৯৭৪ পর্যন্ত।

সেই সময় ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী। তিনি মনে করেছিলেন, এই দ্বীপের কোনও গুরুত্ব নেই। ‘বন্ধু’ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বন্ধুত্ব মজবুত করতে তিনি এই দ্বীপের উপর থেকে ভারতের অধিকার ছেড়ে দেন। স্বাক্ষর হয় ‘ইন্দো-শ্রীলঙ্কা সামুদ্রিক চুক্তি’। ভারত এই দ্বীপের উপর থেকে নিজের অধিকার হারায়।

ভারতমাতাকে ভেঙে টুকরো করার অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে এই কাচাথিভুর প্রসঙ্গই তুলেছেন  মোদী। ইন্দিরা গান্ধীর নাম না করে তিনি সংসদে বলেন, ‘তামিলনাড়ু ও শ্রীলঙ্কার মাঝে অবস্থিত একটা দ্বীপ কাচাথিভু। কেউ একজন সেই দ্বীপ অন্য দেশের হাতে তুলে দিয়েছিল। কাচাথিভু কি ভারতমাতার অংশ ছিল না’।

কাচাথিভু দ্বীপ শ্রীলঙ্কার হাতে তুলে দেওয়ায় সবচেয়ে অসুবিধায় পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। তাঁদের রুজিরুটিতে কোপ পড়েছে। তামিলনাড়ুর জেলেরা এই দ্বীপে মাছ ধরতে যেতেন। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে চুক্তির পর দ্বীপের ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে দেওয়া হয় না তাঁদের। আশেপাশে গেলেও শ্রীলঙ্কার সেনা আটক করে। এই নিয়ে মোদীকে চিঠিও লিখেছিলেন তামিলনাড়ির মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন, ‘রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়াই তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার শ্রীলঙ্কার হাতে কাচাথিভু দ্বীপ তুলে দিয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের ফলে তামিলনাড়ুর মৎসজীবীদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয় এবং তাদের জীবনযাত্রায় এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে’।




Leave a Reply

Back to top button