বাজার দখল গুজরাতের, পিছিয়ে বাংলার ইলিশ
বৃষ্টির দিনে পাতে গরম গরম খিচুড়ির সঙ্গে ইলিশ ভাজা চায় প্রত্যেক বাঙালি। কিন্তু সেই মাছের বাজারে এখন ভাটা। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে অন্য রাজ্যের স্বাদহীন ইলিশ।

শুভঙ্কর, কলকাতা: বর্ষার মরসুম শুরু হয়েছে। এরমধ্যে অনেক দিন ইংলিশে গুড়ি, বৃষ্টিরও দেখা মিলেছে। এমন সময় ভোজন রসিক বাঙালির পাতে ইলিশ পড়বে না তা কি হয়। কিন্তু বাজারের অবস্থা পকেটে আগুন ধরাচ্ছে আম-বাঙালির। কলকাতার বাজারে স্থানীয় ইলিশের দাম চড়- চড়িয়ে বেড়েছে। ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ইলিশ এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকায়। ১২০০ গ্ৰাম থেকে ১৫০০ গ্ৰামের ইলিশ বাংলার রাজধানীর বাজার থেকে এক প্রকার উবে গেছে। যাওবা খুব কষ্টে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে তার দাম মধ্যবিত্ত বাঙালির নাগালের বাইরে। সেই মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০-২০০০ টাকায়। বাংলা ইলিশের বদলে বাজার দখল করে নিয়েছে গুজরাতি ইলিশ।
শেষ দশ দিন ধরে সুন্দরবন অঞ্চল থেকে উল্লেখযোগ্য হারে ইলিশ না ওঠায় বাজারে বাংলায় ইলিশের সংকট দেখা দিয়েছে। যার ফলে অন্য জায়গার ইলিশ আনতে হচ্ছে মার্কেটে। স্বাভাবিকভাবে তার দামও হচ্ছে চড়া। অন্য জায়গার ইলিশ বিশেষ করে গুজরাতি ইলিশের স্বাদ না থাকা সত্বেও কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। গুজরাত মার্কেট থেকে ২.২ কেজি গুজরাটতি ইলিশ মাছ কেনেন শ্রাবণীকর চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “ আমি এখান থেকে গুজরাতি ইলিশ কিনলাম। আমার ছেলে এবং বৌমার জন্য। ওরা নিউ জার্সি থেকে এসেছে। এই ইলিশের স্বাদ নেই জানা সত্ত্বেও কিনতে হল”। মাছ প্রেমীরা অনেক সময় এই ইলিশ মাছ কিনতে বাধ্য হন। মাছের বাজারে এই মাছের নাম ‘মুম্বাই ইলিশ’। সাধারণত বাংলার ইলিশের থেকে এই ইলিশ মাছগুলো একটু বড় হয়ে থাকে। ওজনের দিক থেকে এক -দু’কেজি বেশি হয় এই মুম্বাই ইলিশ।
বর্ষাকালে, প্রাপ্তবয়স্ক ইলিশ মাছ বঙ্গোপসাগর থেকে মিঠা জলে কয়েক’শ কিলোমিটার সাঁতার কেটে আসে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, লবণাক্ত থেকে মিষ্টি জলে আসার সময় ইলিশে হরমোনের পরিবর্তন হয়, যার ফলে মাছ আরও সুস্বাদু হয়ে ওঠে। হাওড়া পাইকারি মাছ মার্কেটের সেক্রেটারি সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ বলেন, “ সম্প্রতি, আমরা ভারুচ থেকে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ পেয়েছি। এরপরে আমরা গুজরাটের ভেরাভাল এবং পোরবন্দর থেকে পাব বলে আশা করছি। এই মাছ মূলত নোনা জলের। বাংলার ইলিশের মত দেখতে হলেও স্বাদ তার মত নয়”। মানিকতলা ও যদু বাবুর বাজারেও বাংলার ইলিশ অবস্থা খুব খারাপ। হন্যে হয়ে মাছ খুঁজতে থাকা সৌমিত্র দাস বলেন, “ আমি শুক্রবার ল্যান্সডাউন মাছের বাজারে ইলিশের খুঁজেছি। মাছ বিক্রেতারা ৫৫০ গ্রাম মাছের জন্য ১০০০ টাকা চাইছে”। তবে এই খারাপ অবস্থার মধ্যে আশার কথা শুনিয়েছেন সুন্দরবন সাগরদ্বীপ মৎসজীবি শ্রমিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি সতীনাথ পাত্র। তিনি বলেন, “ট্রলারগুলো ইলিশের ধরার জন্য আবার যাত্রা শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহে ভাল ইলিশ উঠবে বলে আশা করছি”।