শোভাবাজার রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর ইতিহাস
পলাশীর যুদ্ধে জয়ী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সংবর্ধনা জানাতে, পুজো শুরু হয় ১৭৫৭ সালে। যদিও শোভাবাজার রাজবাড়িতে বাস করা পরিবার এই তথ্যগুলি সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সহমত নন।

কলকাতা: উত্তর কলকাতা হোক কি দক্ষিণ কলকাতা, পুজো মানেই এক জমজমাটি ব্যাপার। পুজোর সময় এক আলাদা সাজে সেজে ওঠে ওটা বাংলা। তবে একটা প্রসঙ্গ মাঝেমধ্যেই উঠে আসে। কোনটা সেরা বারোয়ারি পুজো নাকি বনেদি বাড়ির পুজো? কিন্তু সে যেই হোক না কেন জয় দিনের শেষে হয় দুর্গাপূজারই। কিন্তু প্রতিটি বনেদি বাড়ির পুজো ঘিরে থাকে এক অজানা ইতিহাস। যেমন ধরে নিন শোভাবজার রাজবাড়ির ইতিহাস।
উত্তর কলকাতার এই নামকরা রাজবাড়ীর প্রতিষ্ঠাতা ওয়ারেন হেস্টিংসের গৃহশিক্ষক রাজা নবকৃষ্ণ দেব। এই রাজবাড়ীতে, পলাশীর যুদ্ধে জয়ী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সংবর্ধনা জানাতে, পুজো শুরু হয় ১৭৫৭ সালে। যদিও শোভাবাজার রাজবাড়িতে বাস করা পরিবার এই তথ্যগুলি সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সহমত নন। জানা গিয়েছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, গান্ধীজির মতো ব্যক্তিরা পুজো উপলক্ষে রাজবাড়ীতে এসেছিলেন। এখানেই শেষ নয়। জানা গিয়েছে, স্বয়ং শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এই রাজবাড়িতে এসেছিলেন। তিনি এসেই মাকে প্রণাম করেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভীড় হয়ে যায় রাজবাড়ি।
এই রাজবাড়ির ইতিহাস সম্বন্ধে আরও জানা গিয়েছে, রাজা নবকৃষ্ণ দেবের মৃত্যুর পরে শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায় ৷ তবে সেই পুরোনো নিয়ম আজও চলছে। পুজোর কয়েকটা দিন শোভাবাজার রাজবাড়িতে রাজ্যের ও রাজ্যের বাইরে থেকে ব্রাহ্মণ পণ্ডিতরা আসেন প্রনামি নিতে। পুরনো রীতি অনুযায়ী আজও ঠাকুর দালানে বেদি করে দেবীর ঘট স্থাপন করা হয় এবং ব্রাহ্মণরা বাড়ির ঠাকুর দালানে চণ্ডীপাঠ, বেদ, রামায়ণ ও মধুসূদন পাঠ করেন। এছাড়াও ঢাকি, ব্যান্ড, ইত্যাদি সবই চলে।
প্রতিবছরই দুর্গাপূজার সময় শোভাবাজার রাজবাড়ি এক আলাদা রূপ নেয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভিড় থাকে পুজো প্রেমীদের। শুধু কলকাতারই নয়, বিভিন্ন জেলা থেকে লোকেরা আসেন এই পুজো দেখতে। এমনকি বিদেশী পর্যটকরাও এই পুজো আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করেন প্রত্যেকদিন।