সবাই র‍্যাঞ্চো হতে পারে না অকালে নিভে যায় অনেক দীপ, ব়্যাগিং চলে‌ অখিলিত নিয়ম মেনেই

ব়্যাগিং রোগ ভারত তথা বিশ্বে থাবা বসিয়েছে। কোনও ভ্যাকসিন বা অ্যান্টিবায়োটিক আজও নেই। কবে বন্ধ হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই বর্বরতা‌। উত্তর কালের কাছে।

শুভঙ্কর, কলকাতা: রাজ্যে প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় যাদবপুর। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে এক ছাত্রের  মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ করা হচ্ছে তাঁর এই মৃত্যুর জন্য দায়ী ব়্যাগিং। বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যুর পর ব়্যাগিং নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রাক্তন পড়ুয়াদের হোস্টেলে থেকে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র।

তবে এই ব়্যাগিং শুধুমাত্র যাদবপুর বা রাজ্যের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা নয়। দেশ তথা গোটা বিশ্বে ব়্যাগিং তার ভয়াল থাবা বসিয়েছে। আমির খান অভিনীত সুপারহিট সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টসে’ ব়্যাগিংয়ের বিষয়ে দেখানো হয়েছে। সেখানে আমির অভিনীত ‘র‍্যাঞ্চো’ চরিত্রটি যত সহজে ব়্যাগিংয়ের উত্তর দিতে পেরেছিল। বাস্তব জীবনে বিষয়টা অতটা সহজ নয়। তা বন্ধ হওয়ার বদলে দিনে দিনে আরও বেড়েই চলেছে। এই রাগিংয়ের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

Jadavpur University,swapnadeep Kundu,ragging,Ragging in India,Anti ragging,UGC,All university in India,All University in West Bengal,Jadavpur University student death

গত বছর নভেম্বর মাসের ৭ তারিখে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের বিশেষভাবে সক্ষম এক ছাত্র ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ আনেন। তা নিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাছে অভিযোগও করেন। এই ঘটনার সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই ১৬ নভেম্বর আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র নিউটাউন ক্যাম্পাসের হস্টেলের মধ্যে ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ জানান। তার এক মাস পরে ১০ ডিসেম্বর সাউথ ক্যালকাটা ল’কলেজে, এক আইনের ছাত্রকে ব়্যাগিং ও শারীরিক অত্যাচারের অভিযোগ ওঠে।

এইতো গেল রাজ্যের কথা।অন্য রাজ্যেও ব়্যাগিংয়ের ঘটনা রয়েছে। ১৯৯৬ সালে তামিলনাড়ুতে রাজা মুত্তিয়া মেডিক্যাল কলেজে এক পড়ুয়ার মৃত্যু হয় ‌ ১৯ বছরের পোন নাভরাসুর রহস্যমৃত্যুর পিছনে হাত ছিল এই ব়্যাগিংয়ের। এই ঘটনায় জন ডেভিড নামে এক সিনিয়র ছাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপরে ২০০৯ সালে হিমাচল প্রদেশে ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ মেডিক্যাল কলেজের ১৯ বছরের আমন সত্য খচরুর মৃত্যুতেও একই অভিযোগ ওঠে। মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে তার। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় তাঁর। ২০১২ সালে কর্নাটকের চিক্কাবল্লাপুরের শা-শিব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭ বছরের আজমল পিএম আগুনে পুড়ে মারা যান। সে ক্ষেত্রেও উঠে আসে ব়্যাগিং।

উদাহরণ দিতে গেলে এই প্রতিবেদন শেষ করা যাবে না। এছাড়াও কত ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ সামনেই আসে না। সিনিয়র দাদাদের ভয়ে অভিযোগ জানাতে ভয় পান নতুন পড়ুয়ারা‌ । নতুনরা যখন সিনিয়র হন তখন চলে একই প্রক্রিয়া। এই দাদাগিরির প্রভাবে ঝরে যায় একের পর এক প্রাণ। অনেক কমিটি হয়। তদন্ত চলে কিন্তু কিছুদিন পর ফের একই বিষয়।‌ এইভাবে কত জনের স্বপ্ন ভাঙ্গে। একটি ঝড়ো হাওয়ায় নিভে যায় অনেক দীপ। এই জ্বলন্ত সমস্যার সমাধান কী? উত্তর সেই কালের গর্ভে।




Leave a Reply

Back to top button