ব্রিটিশ আমল থেকে হালের সময়, রাজনীতির স্মৃতির পাতায় ফিরে দেখা কলকাতা পৌরসভার ইতিহাস

সময়ের ইতিহাসে লেগে থাকা তিনশো বছরের পুরনো এক জনপদ। গঙ্গার গা ঘেঁষে পরপর ছোটো তিনটি গ্রাম কলকাতা-সুতানুটি-গোবিন্দপুর, তা নিয়েই আজকের তিলোত্তমা ( Kolkata ) , প্রতিনিয়ত যার ধমনী দিয়ে বয়ে চলছে প্রাচীন কালের ইতিহাস। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর কলকাতা সহ বরিষা থেকে হালিশহর পর্যন্ত জমির জমিদারিত্বের অধিকার দেন সাবর্ণ রায়চৌধুরীর পরিবারকে। কিন্তু ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালেই এই রায়চৌধুরিদের পরামর্শ দেওয়া হলো ১৩০০ টাকায় জমিদারির স্বত্ব ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে হস্তান্তর করার, পরামর্শ দিলেন মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের পৌত্র আজিম-উস-শান।  এরপর পলাশীর যুদ্ধের পর কোম্পানি দেওয়ানি লাভ করায় বঙ্গে শুরু হলো ব্রিটিশ শাসন।

কলকাতা ( Kolkata ) সম্পূর্ণ আলাদা প্রদেশে পরিণত হলে প্রশাসনের দায়ভার অর্পিত হলো একজন সভাপতির নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের একটি কাউন্সিলের ওপর। আবার কর সংগ্রহ এবং নানান বিতর্কের মীমাংসার দায়িত্বে রইলেন একজন করে জমিদার। এরপর ১৭২৬ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর এক রয়্যাল সনদের মধ্যে দিয়ে একজন মেয়র এবং ৯ জন অল্ডারম্যানকে নিয়ে তৈরী হলো প্রথম কর্পোরেশন। মূলত বিচার সংক্রান্ত কাজই দেখাশোনা করতেন এনারা। প্রশাসন চালাতেন জমিদার এবং তাঁকে সাহায্য করতেন এক ডেপুটি যিনি ‘ব্ল্যাক জমিদার’ নামে পরিচিত ছিলেন বলে জানা যায়।

KOLKATA 2
আবার একবার রাজকীয় সনদের মধ্যে দিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা এবং দায়িত্ব নতুন ভাবে নির্মিত হলো ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের সনদে জাস্টিস অফ পিসের হাতে গেল শহরের ব্যবস্থাপনা। ঠিক এক বছর পরই অর্থাৎ ১৭৯৪ থেকে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এদের চেয়ারম্যান এবং একই সঙ্গে পুলিশ কমিশনার এবং মিউনিসিপ্যালিটির চিফ এক্সিকিউটিভ হিসাবে কাজ করতে লাগলেন। তারপর লর্ড ওয়েলেসলির হস্তক্ষেপে ৩০ জন সদস্য নিয়ে গড়ে উঠল ‘শহর উন্নয়ন কমিটি’ (টাউন ইমপ্রুভমেন্ট কমিটি)। কলকাতার ( Kolkata ) পৌর সরকারের দায়িত্ব হাতে তুলে নিলেন কলকাতার ‘জাস্টিস অফ পিস’ এবং প্রদেশের বিচারকরা, যারা এই শহরের বাসিন্দা।।

অবশেষে ১৮৭৬ সালে ‘ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল কনসোলিডেশন অ্যাক্ট’ পাশ হলে মোট ৭২ জন কমিশনার, ১ জন চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান নিয়ে তৈরী হলো কলকাতা কর্পোরেশন। ১৮৮৮ সালে পৌরসভার পরিধি বেড়ে যুক্ত হলো শহরের আরও বেশ কিছু অংশ। উল্লেখ্য, ১৮৯৯ সালের ‘ম্যাকেঞ্জী অ্যাক্টে’ কলকাতার প্রশাসনের দায়ভার দেওয়া হল তিন সমন্বয়কারী কর্তৃপক্ষের ওপর– কর্পোরেশন, জেনারেল কমিটি এবং চেয়ারম্যান।

১৯২৪ সালে কলকাতার ( Kolkata ) প্রথম মেয়র পদের জন্য নির্বাচিত হলেন চিত্তরঞ্জন দাশ এবং চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হলেন সুভাষচন্দ্র বসু হলেন। এরপর একে একে বহু খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব কলকাতার মেয়র পদের দায়িত্বে ছিলেন যাঁদের মধ্যে যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত সুভাষচন্দ্র বসু ডঃ বিধান চন্দ্র রায় সন্তোষ কুমার বসু নলিনী রঞ্জন সরকার আবুল কাসেম ফজলুল হক প্রমুখেরা। বর্তমানে কল্লোলীনির ৩৯তম মেয়র ২০১৮ সালে নির্বাচিত ফিরহাদ হাকিম।




Leave a Reply

Back to top button