2001 Parliament Attack: ২০ বছর ধরে গণতন্ত্রের স্তম্ভে লেগে থাকা দগদগে রক্তের দাগ, মোছেনি আজও

ভারতের ইতিহাসের(Indian History) পুঁথিটা নেড়েচেড়ে দেখলে একটি বিষয় চোখে পড়ে তা হল, স্বাধীনতা পূর্ব এবং পরবর্তী উভয় সময়ই দেশের মাটিতে সাম্প্রদায়িক(Communal) বিদ্বেষের ছাপ খুবই স্পষ্ট। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, একাধিক বর্ণ, ধর্ম, জাতির এই দেশের একতার মধ্যেও সাম্প্রদায়িক রঙ বহু ক্ষেত্রেই রঙিয়ে দেয় দেশের অনেকাংশের মানুষকে। আর যার জেরেই সৃষ্টি হয় সাম্প্রদায়িক হিংসার। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকেই দেশে সন্ত্রাস হামলা(Terror Attack) বহু সময়ই দেখা গেছে। যার মোক্ষম উদাহরণের কথা বলতেই মানুষের মাথা আসে ২৬/১১ সন্ত্রাস হামলার(26/11 Terror Attack) কথা। কিন্তু স্মৃতি পাতায় এই ২৬/১১-এর মতোই রয়েছে আরও কিছু ভয়ঙ্কর স্মৃতি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০০১-এর সংসদ আক্রমণ(2001 Terror Attack)।
ভারতের গণতান্ত্রিক(Democracy) স্তম্ভে আক্রমণ করেছিল কিছু দুষ্কৃতি। আজও মোছেনি গণতন্ত্রের গায়ে লেগে থাকা সেই রক্তের দাগ। ২০০১ সালে আজকের দিনেই অর্থাৎ ১৩ই ডিসেম্বর একটি অধিবেশন চলছিল সংসদে এবং সেখানে উপস্থিত ছিলেন দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এল কে আদবানি(L.K.Advani ), প্রাক্তন প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী হরিণ পাঠক(Harin Pathak)- সহ একাধিক স্বনামধন্য সাংসদ ও আধিকারিক। এমতাবস্থায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও সংসদের স্টিকার লাগানো বন্দুক, বোমায় পরিপূর্ণ একটি সাদা অ্যাম্বেসেডর গাড়ি সংসদে মূল প্রবেশদ্বার মাধ্যমে সংসদে প্রবেশের চেষ্টা করে। সরকারি স্টিকার(Sticker) লাগানো থাকার কারণে গাড়িটি একেরপর এক রক্ষাকারী গেট দিয়ে প্রবেশ করে যাচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে হটাৎই সংসদের ১১ নং গেট(11 number gate) থেকে উপরাষ্ট্রপতি(Vice President) তাঁর গাড়িতে ওঠার সিধান্ত নেন। ফলত, সেখানে একাধিক নিরাপত্তারক্ষী(Security) সহ গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। ১১ নং গেটে নিরপত্তারক্ষীদের উপস্থিতি সম্পর্কে একদমই অজ্ঞাত থাকায় দুষ্কৃতিরা সেই দিকেই চলে যায়।
এমতাবস্থায়, দুষ্কৃতিদের গাড়িটি চোখে পড়ে ১১ নং গেটে উপস্থিত থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের। সামনে তাঁদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাতে হাড়ি ভাঙার মতো অবস্থা হয় সেই সন্ত্রাসবাদীদের। যথারীতি তাঁরা সেই দিক থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে নিতেই শুরু হয়ে যায় গুলিযুদ্ধ। গোটা সংসদ জুড়ে সন্ত্রাস হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ে। টানা ৩০ মিনিট ধরে চলে এই যুদ্ধ। অবশেষে সংসদের সীমানায় মৃত্যু হয় দুষ্কৃতিদের। যুদ্ধ শেষে দেখা যায়, এই গোটা হামলায় মৃত্যু হয়েছে ৫ সন্ত্রাসবাদীর। পাশাপাশি, সন্ত্রাসবাদী হামলা থেকে দেশকে বাঁচাতে গিয়ে শহিদ হন ৫ জন দিল্লি পুলিশের কর্মকর্তা, ২জন সংসদের নিরাপত্তারক্ষী এবং একজন সিআরপিএফ কনস্টেবল। একইসঙ্গে, এই গুলিযুদ্ধের মধ্যে পড়ে মৃত্যু হয় একজন সংসদের বাগানে মালির ও একজন চিত্রসাংবাদিকের।
আরও পড়ুন…..26/11 – প্রাণ বাজি রেখে লড়েছিলেন মুম্বাই হামলায়, ১৩ বছর পরে আজও হিরো মেজর উন্নীকৃষ্ণন
গোটা ঘটনার শেষে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এল কে আদবানি বলেন, “পাকিস্তান সহায়তায় বেড়ে ওঠে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈবা গোটা হামলার পিছনের মূল মাথা।” তবে প্রথমেই জঙ্গি সংগঠনগুলি এই হামলার দায় নিতে অস্বীকার করে। যার জেরে শুরু হয় তদন্ত। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল চারজন ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করে। এদের ব্যবহৃত গাড়ি ও মোবাইল ট্র্যাকিং মাধ্যমে জঙ্গি কার্যকলাপের প্রমাণ মেলে। এই চারজন হল মহম্মদ আফজল গুরু, যিনি মূলত জেকেএলএফ বা জম্বু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের প্রাক্তন জঙ্গি। ১৯৯৪ সালে তিনি আত্মসমর্পণ করেছিলেন, তাঁর চাচাতো ভাই শওকত হোসেন গুরু, শওকতের স্ত্রী আফসান গুরু এবং এসএআর গিলানি, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবিক শিক্ষক। সন্দেহভাজনদের প্রত্যেককে আদালতে তোলা হয়। আদালত তাঁর রায়ের মাধ্যমে আফসানকে মুক্তি দেন। গিলানি, শওকত ও আফজলকে মৃত্যুদন্ড দেন। তবে পরবর্তীকালে ২০০৩ সাল নাগাদ গিলানিকে আদালত ছেড়ে দেয়। ২০০৫ সাল নাগাদ আফজলের মৃত্যুদন্ড বহাল থাকে এবং শওকতের সাজা ১০ বছরের কারাদন্ডে পরিণত হয়। ২০০৬ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর অবশেষে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় মহম্মদ আফজল গুরুকে।