Farm Laws Repealed- ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে, গুরুজয়ন্তীর দিন প্রত্যাহার তিন বিতর্কিত কৃষি বিলের
মাসের পর মাস সিঙ্ঘু বর্ডারের বসে থাকা। কৃষক থেকে হটাৎ খালিস্তানি বা কখনো আবার দেশদ্রোহী হয়ে ওঠা। একাধিক বন্ধ, আন্দোলন, আত্মহত্যা, বেদনা, কষ্ট, এবার সব কিছুরই ঘটলো অবসান। প্রত্যাহার হল তিন বিতর্কিত কৃষি আইন। আজ গুরু নানকের জন্মদিনে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এমনটাই ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কৃষকদের ফের জমিতে ফিরে চাষের জমিতে মনোনিবেশের বার্তা দিলেন তিনি।
দেশ জুড়ে সাঁড়াশি প্রতিবাদের জেরে অবশেষে পিছু হটল কেন্দ্র। নতুন তিন কৃষি আইনের জেরে গোটা দেশে তৈরি হয়েছিল উত্তাল পরিস্থিতি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কৃষকরা রাজধানীতে আসেন। চলে আন্দোলন, বিক্ষোভ, সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠক কিন্তু মেলে না কোনো সুরাহা। অবশেষে গুরুজয়ন্তীর দিন তাঁদের নিজেদের অধিকারকে ছিনিয়ে নিল কৃষকরা। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই তিনটি কৃষি বিল পাশের পর থেকেই রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছিল লক্ষ লক্ষ কৃষকরা। মাসের পর মাস ধরে দিল্লি সীমানা ঘেরাও করে চলে বিক্ষোভ। সেই বিক্ষোভে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা-সহ একাধিক রাজ্য থেকে কৃষকরা এসে যোগ দান করেছিলেন। এছাড়াও কৃষকদের উৎসাহ জোগাতে, সহযোগিতা করতে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল একাধিক অবিজেপি নেতা।
বহু মাস ধরে চলে এই বিক্ষোভ। দেশের মধ্যে নিজেদের আন্দোলনকে শক্ত করতে একাধিক প্রচার করেন কৃষক নেতা রাকেশ টিকাইত। দেশে নানা রাজ্যের ঘুরে ঘুরে মানুষের কাছে পৌঁছে তিন কৃষক বিল সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেন তিনি। এমনকি, কৃষকদের তরফে বিল বাতিলের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টেও দায়ের হয় মামলা। যার জেরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ পড়ে এই আইনে। আজ গুরু নানকের জন্মদিনে বড় ঘোষণা করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে এদিন তিনি বলেন, “এই আইন আনার পিছনে আমার সৎ উদ্দেশ্য ছিল। শুরু থেকে কৃষকদের বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। এমনকি তিনটি কৃষি আইনকে স্বাগত জানিয়েছিল একাধিক কৃষক সংগঠন। তবে দুবছর ধরে সেই আইনের প্রয়োগ বন্ধ রাখা হয়েছিল। এবার তিনটি কৃষি আইনই প্রত্যাহার করে নেওয়া হল। একাংশের কৃষককে বোঝাতে পারা যায়নি বলেই কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হল।” এই আইন প্রত্যাহারের পরই কৃষকদের উদ্দেশ্যে তিনি জানান, “এবার জমিতে ফিরে যান চাষের কাজে মনোনিবেশ করুন। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কেন্দ্র ক্ষুদ্র চাষিদের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। কেন্দ্রের কৃষি বাজেটে আগের তুলনায় ৫ গুণ বৃদ্ধি আনা হয়েছে। কৃষকদের জন্য একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।”
আরও পড়ুন…….Guru Nanak Jayanti – আবির্ভাবেই লুকিয়ে অগণিত রহস্য, জেনে নিন গুরু নানকের জীবনের অজানা কথা
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই কৃষি আইন প্রত্যাহারের পিছনে এক বিরাট রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন ওয়াকিবহাল মহল। বছর ঘুরতেই উত্তরপ্রদেশ সহ দেশের একাধিক রাজ্যে নির্বাচন। তাঁর উপর ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে লোকসভা নির্বাচন। তার উপর একাধিক রাজ্যে সদ্য সমাপ্ত উপনির্বাচনগুলিতেও ভালো ফল করেনি বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে খানিক নিজেদের পিঠ বাঁচাতেই এই ঘোষণা মোদী সরকারের, এমনটাই বলছে বিশেষজ্ঞরা।
তবে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণ মাধ্যমে শুধুই যে আইন প্রত্যাহার করলেন এমনটা মোটেই নয়। কৃষকদের জন্য জিরো বাজেট কৃষিকাজ প্রকল্পের ঘোষণাও করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই বিষয়ে তিনি বলেন, “ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যবৃদ্ধি, চাষের সময়কে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বদল আনা সহ একাধিক বিষয়ে উন্নয়নের লক্ষ্যেই একটি কমিটি গঠনের সিধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা থাকবেন। কৃষক ও কৃষিবিজ্ঞানী সহ বিভিন্ন গবেষকরা থাকবেন।”