Farm Laws Repealed- কী ছিল এই তিন কৃষি আইন? কেনই বা বিতর্ক?
একে ২০২২, ২০২৩ এ বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচন, তাতে দোসর ২০২৪ এ দেশে ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াই, লোকসভা নির্বাচন। তার আগে এ যেন এক মাস্টার স্ট্রোক(masterstroke) । গুরু নানকের (GuruNanak) জন্মদিনে ৩ কৃষি আইন (Farm Laws) বাতিলের ঘোষণা করলেন নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)।
শুক্রবার জাতীয় উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের তপস্যায় হয়ত কিছুর ভুল ছিল। সেই কারণেই আমরা কৃষকদেরকে এই আইন সম্পর্কে বোঝাতে পারিনি। তবে আজ কাউকে দোষারোপ করার সময় নয়। আজ আমি দেশকে বলতে চাই, আমাদের সরকার তিনটি কৃষি আইন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
কী এই তিন কৃষি আইন?
তিনটি কৃষি বিলকে সংশোধন করে ২০২০-তে আইনে পরিণত করে মোদী সরকার। এরপর থেকেই দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানে তুমুল প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়। তারপর তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে দেশের বিভিন্ন অংশে। প্রধানমন্ত্রীর শুক্রবারের এই ঘোষণার পর কৃষকদের মধ্যে ধরা পড়েছে উচ্ছ্বাস। শুরু হয়েছে মিষ্টি, লাড্ডু বিতরণ।
এই তিনটি আইন হল, ফারমার্স প্রোডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রোমোশন অ্যান্ড ফেসিলিটেশন) অ্যাক্ট, ২০২০ (The Farmers’ Produce Trade and Commerce (Promotion and Facilitation) Bill, 2020), ফারমার্স (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রটেকশন) এগ্রিমেন্ট অব প্রাইস অ্যাসিওরান্স অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস অ্যাক্ট, ২০২০ (Farmers Empowerment & Protection) Agreement of Price Assurance & Farm Services Bill), এসেনশিয়াল কমোডিটিজ (সংশোধিত) বা অত্যাবশ্যক পণ্য আইন (The Essential Commodities (Amendment) Bill, 2020)।

এই বিল আইনে পরিণত করার সময় সরকারের দাবি ছিল, এই কৃষি আইনে বড় ব্যবসায়ীদের একাধিকার (MONOPOLY) বন্ধ হবে। মান্ডির বাইরেও কিষানরা যেখানে খুশি এবং যাঁকে খুশি শস্য বিক্রি করতে পারবেন। কৃষকরা বাজারের সর্বোচ্চ মূল্য পাবেন। সরকারের যুক্তি অনুসারে, একদিকে এই আইনে আন্তঃরাজ্য বাণিজ্যের উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে আবার অন্যদিকে পরিবহন খরচ কমানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে। সর্বোপরি সরকার জানিয়েছে, বিলের উদ্দেশ্য ছিল কৃষকদের কৃষি-বাণিজ্য সংস্থা এবং খুচরো পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করা।
আরও পড়ুন…….Farm Laws Repealed- মুখের কথায় নেই ভরসা, সংসদ থেকে বাতিল না হওয়া পর্যন্ত ফিরতে নারাজ কৃষকরা
কৃষকদের অভিযোগ, এই আইন চালু হলে সরকার ধীরে ধীরে ন্যূনতম সহায়তা মূল্যে (MSP) বাজার থেকে ফসল কেনা বন্ধ করে দেবে এবং বাজার থেকে সরে যাবে সরকারি নিয়ন্ত্রণ। পুঁজিপতিদের মুখের দিকে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না কৃষকদের। বড় খুচরো ব্যবসায়ীরা কৃষকদের উপরে আধিপত্য বিস্তার করবে। ফলে মুখ থুবরে পড়বে ছোট থেকে মাঝারি কৃষক। ব্যবসায়ীরা ফসলের যেমন ইচ্ছা তেমন দাম ঠিক করতেও পারবে। তাই, কৃষকদের আতঙ্ক সংস্থাগুলিই কৃষি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা শুরু করবে। এছাড়া, আইনে উল্লেখ আছে কৃষকরা দাম না পাওয়া, সঠিক মূল্য নির্ধারণ করতে না পারা এসবের জন্য কোর্টে যেতে পারবেন না, লোকাল বিডিওই অন্তর্বর্তীকালীন কোর্ট গঠন করে এই সমস্যার সমাধান করবে।
আইন ঘোষণা হতেই শুরু হয় আন্দোলন। কৃষকরা হাজারের সংখ্যায় রওনা দেয় দিল্লির উদ্দেশ্যে। কিন্তু দিল্লির ঢোকার আগেই তাদের বাধা দেয় প্রশাসন, আটকে দেওয়া হয় দিল্লির বর্ডারে। কিন্তু কৃষকরা সেখানেই অবস্থান বিক্ষোভ বসে যায়। আজ প্রায় ১ বছরের বেশি সময় ধরেই চলছে অবস্থান বিক্ষোভ। কিন্তু প্রধানতরই নরেন্দ্র মোদীর আজ দেশের নামে ভাষণে পরিষ্কার হয়ে গেল থাকছে না এই আইন। আর তাতেই খুশির আবহ সৃষ্টি হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষকদের মধ্যে। কিন্তু এখনও রাজধানীর অবস্থান বিক্ষোভ ছাড়তে নারাজ কৃষক নেতারা। কৃষক নেতা রাকেশ টিকেত জানিয়েছেন, “ সংসদ থেকে যেদিন এই আইন তুলে নেওয়া হবে, সেদিনই আমরা এই অবস্থান বিক্ষোভ ছাড়ব”।