জ্বালানির দামে জ্বলছে জীবন! ফের কাঠ কুড়িয়েই চলছে গরীবের হেঁসেল
পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাসের আকাশছোঁয়া দামে নাভিশ্বাস মধ্যবিত্তের। সংসদে প্রায়ই শোরগোল জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে। তবে মধ্যবিত্তের যতই দুশ্চিন্তা বাড়াক তেলের দাম, এখনো এলপিজি সিলিন্ডারের গ্যাসেই রান্না চলছে বেশিরভাগ বাড়িতে। তবে তাদের কথা কেউ ভাবে না যাদের মাথার ওপর ছাদ বলতে টিন, দরমা এবং কালো প্লাস্টিক।
রেশনের চালের ভাত রাঁধার জন্য লকডাউনের আগে টালা থেকে যাদবপুরের একাধিক বস্তিতে মেয়েরা কেরোসিনের স্টোভে চাপিয়ে দিতো ভাত আর জল, তারপর সেদ্ধ হয়ে গেলে ফ্যান ঝরিয়ে নিতো। কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে লকডাউনের পর। এখন ভাত একবার ফুটলেই হাঁড়ি উপুড়। আবার কিছুক্ষণ পর আরেক ফুটে ভাত তরকারি একসঙ্গে রান্না। এখন এমন অবস্থা যে কেরোসিনের স্টোভও ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ কেরোসিনের দাম নব্বই টাকা লিটার, আর রেশনে পঞ্চাশ টাকা।
তাহলে উপায়? সরকার যতই বলুক দেশ এগোচ্ছে আসলে পেট চালাতে নিম্নমধ্যবিত্ত ঝুপড়িবাসীদের হাঁটতে হচ্ছে আদিম পথেই। ভরসা সেই কাঠ অথবা তোলা উনুন। নিজে হাতে লোহার বালতিতে উনুন বানিয়ে অথবা কাঠের উনুন বানিয়ে তাতেই রান্না সারতে হচ্ছে। সঙ্গে দোসর আতঙ্ক, এই বুঝি কাঠের জ্বালের আগুনের ফুলকি থেকে আগুন ধরে গেল টিন আর প্লাস্টিকের চাদরের ঘরে। তাছাড়া দূষণের চোখরাঙানি তো আছেই।
প্রশ্ন এটাই যে নিম্নবিত্তের এই দুর্দশা কি কেবলমাত্র অতিমারির জের? বাস্তব বলছে তা নয়। ২০১৪-১৫ সালে যখন মোদী সরকার প্রথম ক্ষমতায় আসেন তখন কেরোসিনের ওপর ভর্তুকি দেওয়া হতো চব্বিশ হাজার কোটি টাকা। ধীরে ধীরে ভর্তুকি কমতে কমতে তা শূন্যে এসে দাঁড়িয়েছে। অথচ পেট্রোল ডিজেল রান্নার গ্যাস নিয়ে যে পরিমাণ আলোচনা হয় তার সামান্যতমও হয় না কেরোসিন নিয়ে। যদিও রাজ্য সরকার সূত্রে দাবি যে তৃণমূল সাংসদরা কেরোসিনের বরাদ্দ কমানোর প্রতিবাদে চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রের দপ্তরে। অথচ আসল ঘটনা এটাই যে কেন্দ্রের বরাদ্দ বা কোটার তেলটুকুও রাজ্য সরকার তোলে না। ওয়েস্ট বেঙ্গল কেরোসিন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি অশোক গুপ্তের বক্তব্য “প্রতি মাসে আড়াই থেকে তিন হাজার লিটার তেল থেকে যাচ্ছে কোম্পানির কাছে। ওই তেল ল্যাপ্স হয়ে যাচ্ছে”
এসবের মধ্যে সবচেয়ে মজার বিষয় হল গ্যাস এবং কেরোসিন বিষয়ে কেন্দ্রের সরকারি রিপোর্ট। সরকারি রিপোর্ট বলছে ২০১৬ সালে সূচনা হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে এলপিজি গ্যাস নাকি পৌছে গেছে ৯৪ শতাংশ ভারতীয় পরিবারে। অথচ একাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে এক কোটি কুড়ি লক্ষ গ্রাহক একটা সিলিন্ডার নিয়ে আর নেননি সিলিন্ডার। এর কারণ হিসেবে নীতি আয়োগের নির্দেশিকা আরো বিষ্ময়কর। তাদের মতে গরীব মেয়েরা কাঠ কুড়োতে গিয়ে সময়ের অপচয় করে এবং কাঠের জ্বালানি দূষণ ঘটায়। তাই তাদের শিক্ষিত করে সিলিন্ডারের জন্য ঋণ দিতে হবে। বলা বাহুল্য এ নির্দেশিকা তাত্ত্বিক দিক থেকে অতটাই নির্ভুল যতটা কেন্দ্রীয় সরকারের এলপিজি রিপোর্ট। তবে সরকারি রিপোর্টের তত্ত্ব কথা কবেই বা পরোয়া করেছে টিন দরমার ঘরের রুক্ষ বাস্তবের?