কমলালেবু বিক্রেতা থেকে পদ্মশ্রী! ‘অক্ষর সন্ত’ হাজাব্বা জ্বালাচ্ছেন শিক্ষার আলো

ভারতের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরষ্কার এবং উপাধিগুলির মধ‍্যে পদ্মশ্রী পুরষ্কার বরাবরই অন‍্যতম সেরা হিসাবে গণ‍্য হয়। এটি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সিভিলিয়ান পুরষ্কার। সোমবার রাষ্ট্রপতি ভবনে ২০২১ সালের পদ্মশ্রী পুরষ্কার বিজেতাদের পুরষ্কৃত করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও উপস্থিত ছিলেন।

স্বাভাবিকভাবেই সমাজ এবং দেশের সম্মানের জন‍্য উল্লেখযোগ্য কোন কৃতিত্বের পরিচায়ক না হলে পদ্মশ্রী উপাধি লাভ করা সহজ বিষয় নয়। তবে খেলোয়াড় বা চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত ব‍্যক্তিরা ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ‍্যেও এমন অনেকে আছেন যাদের সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ তাদের করে তুলেছে অসাধারণ।

পদ্মশ্রী উপাধি,কর্ণাটকের কমলালেবু বিক্রেতা,অক্ষর সন্ত,গ্রামীন শিক্ষায় অবদান,padmasri award,Orange seller of Karnataka,letter saint,contribution in rural education

২০২১ এর এমনই এক পদ্মশ্রী উপাধি বিজয়ীর নাম হাজাব্বা হারেকালা। ছেষট্টি বছর বয়সী এই মানুষটি পেশায় কমলালেবু বিক্রেতা। কোনদিন স্কুলের গন্ডী টপকানোর সুযোগ হয়ে ওঠেনি তাঁর পক্ষে। অথচ তিনিই ম‍্যাঙ্গালোরের হারেকালা নিউপাড়পু আদিবাসী গ্রামে প্রতিষ্ঠা করলেন স্কুল যার ছাত্রসংখ‍্যা বর্তমানে ১৭৫। বলাই বাহুল‍্য গ্রামীণ শিক্ষার জগতে এ এক বৈপ্লবিক পদক্ষেপ।

কিন্তু হাজাব্বার মাথায় এই পরিকল্পনা এলো কিভাবে? উত্তরে তিনি জানাচ্ছেন ১৯৭৭ সাল থেকে কমলালেবু বিক্রি করছেন তিনি। ১৯৭৮ সালে এক বিদেশী তার কাছ থেকে কমলালেবু কেনার পর যখন দাম জিজ্ঞেস করেন তখন তিনি তা বুঝতে পারেননি। “সেই বিদেশীর সঙ্গে কথাবার্তা বলতে না পারায় আমার খুব খারাপ লেগেছিল। তখনই আমি ঠিক করি গ্রামে একটি স্কুল তৈরী করবো” এমনটাই জানাচ্ছেন ছেষট্টি বছর বয়সী পদ্মশ্রী হাজাব্বা।

পদ্মশ্রী উপাধি,কর্ণাটকের কমলালেবু বিক্রেতা,অক্ষর সন্ত,গ্রামীন শিক্ষায় অবদান,padmasri award,Orange seller of Karnataka,letter saint,contribution in rural education

তবে তার এই ভাবনা বাস্তবায়িত হতে সময় লেগে যায় প্রায় দুই দশক। দুহাজার সালে অবশেষে হাজাব্বার স্বপ্নের স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় আঠাশজন ছাত্রছাত্রী নিয়ে। শিক্ষাক্ষেত্রে তার এত বড় অবদানের জন‍্য তাকে ‘অক্ষর সন্ত’ (letter saint) উপাধিতে ভূষিত করেন তৎকালীন বিধায়ক ইউ টি ফরিদ।

পদ্মশ্রী পুরষ্কারের অর্থ এবং অন‍্যান‍্য বিভিন্ন পুরষ্কার ও সাহায‍্যমুল‍্য থেকে প্রাপ্ত অর্থ তিনি কিভাবে কাজে লাগাতে চান, এই প্রশ্ন করা হলে হাজাব্বা জানিয়ে দেন যে তার লক্ষ‍্য আরো অনেক স্কুল এবং কলেজ তৈরী করা তার গ্রামে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার বিনীত আবেদন একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের জন‍্য একটি প্রাক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ তৈরী করার। পুরষ্কার গ্রহণের পর তিনি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী নলিন কুমার প‍্যাটেল, জেলা সভাপতি, বিধায়ক প্রমুখকে ধন‍্যবাদ জ্ঞাপন করেন তার জনহিতকর কার্যক্রমকে সম্মান প্রদানের জন‍্য।




Back to top button