ফাঁকা বাড়ি, নিশব্দ ঘর চারিদিকে ছড়িয়ে কালিকাপ্রসাদ ও পূর্বপুরুষদের স্মৃতি

কালিকাপ্রসাদের ঠাকুরদা কালীজয় ভট্টাচার্য তৈরি করেন এই বাড়িটি। বাড়ির শেষ সংগীত শিল্পী ছিলেন কালিকাপ্রসাদ। তিনি মারা যান 2017 সালে। তারপর থেকে এই বাড়ির কেউই সংগীত চর্চায় আসেননি। দেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আত্মীয়-স্বজনরা অনুষ্ঠানে এই বাড়িতে উপস্থিত হলেই তৈরি হয় গানের মহল। ১৯৭০ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর কালিকাপ্রসাদের জন্মদিন।

শুভঙ্কর, অসম : বাড়ির ভিতর থেকে তবলার আওয়াজ আরও ভেসে আসে না। শোনা যায় না সুর-তাল। গান গাওয়ার কেউ আর নেই এই বাড়িতে। যে ঘরগুলো সংগীত ও আড্ডায় ভরপুর থাকতো আজকে সেখানে শুধুই নীরবতা। বরাক উপত্যকায় শিলচর সেন্ট্রাল রোডের ভট্টাচার্য বাড়ি। গত ২ দশকে এই বাড়ির সংগীত প্রেমীরা একে একে হারিয়ে গেছেন। কুমার ভট্টাচার্য, আনন্দময়ী ভট্টাচার্য , মৃণালিনী ভট্টাচার্য, কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য প্রয়াত হয়েছেন। বর্তমান প্রজন্ম অন্যান্য কাজের তাগিদে এই সংগীতকে নিজেদের পেশা হিসেবেও নেয়নি। স্বাভাবিকভাবে সুর ছন্দ তাল হারিয়ে একাকী দাঁড়িয়ে রয়েছে ইটের সারিগুলো।

কালিকাপ্রসাদের ঠাকুরদা কালীজয় ভট্টাচার্য তৈরি করেন এই বাড়িটি। বাড়ির শেষ সংগীত শিল্পী ছিলেন কালিকাপ্রসাদ। তিনি মারা যান 2017 সালে। তারপর থেকে এই বাড়ির কেউই সংগীত চর্চায় আসেননি। দেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আত্মীয়-স্বজনরা অনুষ্ঠানে এই বাড়িতে উপস্থিত হলেই তৈরি হয় গানের মহল। ১৯৭০ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর কালিকাপ্রসাদের জন্মদিন। এই দিনটিকে উপলক্ষ করে সবাই এক জায়গায় মিলিত হন এবং গান-বাজনার একটা পরিবেশ গড়ে ওঠে। তালিকার জন্মদিনের দিন তার বোন ইন্দ্রানী ভট্টাচার্য এই সংগীত শিল্পীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, “ আমাদের এই বাড়িটা তৈরি করেছিলেন ঠাকুরদা কালীজয়ী ভট্টাচার্য। তিনি পেশায় ছিলেন কবিরাজ চিকিৎসক। বাড়িতে গড়ে ওঠে কবিরাজ আশ্রম। এর সঙ্গে সঙ্গে সংগীত চর্চায় ছিল তাঁর প্রবল আগ্রহ। এই কারণেই তিনি তার ছেলেমেয়েদের গান-বাজনা শেখান। প্রতিদিনই রেওয়াজ চলতো এই বাড়িতে। রামচন্দ্র ভট্টাচার্য অর্থাৎ কালিকার বাবা ছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রচার ও প্রসারক।  মা গীতাঞ্জলি ভট্টাচার্যও খুব ভাল গান গাইতেন। আমাদের গোড়া ব্রাহ্মণ পরিবার।  পুজো চলাকালীন ঠাকুরদা নির্দেশ দিতেন গান বাজনার ছাড়া অন্য কোন শব্দ যেন না আসে। বাবা জেঠুদের কাছ থেকে শুনেছি এই বাড়িতে এসেছিলেন পারভীন সুলতানা, আলাউদ্দিন খাঁ, আয়াত আলী খাঁ, উদয় শংকর , বাহাদুর খাঁ-রা। ছেলেবেলা থেকে এই সংগীত পরিবেশের মধ্যে বড় হওয়ার জন্য কালিকার মধ্যেও একটা আগ্রহ তৈরি হয়। সেই সময়ে আমাদের ছোট কাকার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে একটা লোকদল। নাম দেন ‘লোকবিচিত্রা’। এই দলে গান গাইতে থাকে কালিকা। ছোটকাকু অনন্তকুমার ভট্টাচার্যের হাত ধরেই সংগীত জগতে প্রবেশ ঘটে কালিকা প্রসাদের”।

Kalika Prasad Bhattacharya,Assam,Kaliprasads sister Indrani

 

২০১৭ সালে ভারত – বাংলাদেশের শিল্পমহলের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি হয় ‘ভুবনমাঝি’ ছবি। এই ছবিতেই শেষ বারের জন্য সংগীত পরিচালকের ভূমিকায় দেখা যায় কালিকাপ্রসাদকে। সেই বছরেই ৭ই পশ্চিমবঙ্গে হুগলি জেলায় একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। এরপর থেকে অসম সরকার প্রতিবছর এই দিনটিতে লোকসংহতি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।




Leave a Reply

Back to top button