Shalu Saini: যাঁর কেউ নেই, তাঁর ‘শালু’ আছে! করোনা পর্বে যাঁর হাত ধরে হয়েছে শ’য়ে শ’য়ে বেওয়ারিশ লাশের সৎকার

‘যাঁর  কেউ নেই, তাঁর ভগবান আছেন’। কিন্তু কে এই ঈশ্বর? আমাদের নিত্যদিনে যাঁদের আমরা সিংহাসনে বসে পুজো করে থাকি  নাকি আমার-আপনার মতোই একেবারে রক্তমাংসের মানুষ সে? এই প্রশ্ন নিয়ে মানুষের মনে দ্বন্দ্বের শেষ নেই। রয়েছে যুক্তি, রয়েছে তর্ক। আছে একাধিক অজানা প্রশ্ন। কিন্তু হয় তো উত্তরপ্রদেশের ( Uttar Pradesh ) বহু মানুষই এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন। তাঁদের মতে, ‘যাঁর কেউ নেই, তাঁর শালু আছেন।’ 

কিন্তু কে এই শালু ( Shalu Saini )? একেবারে ভগবানের সিংহাসনে বসে পড়ছে সে। কীই বা করেছে? এমন প্রশ্ন মনের কোণের তৈরি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এই বিশ্ব দেখেছে এক বিরাট মহামারি। কাছের মানুষদের হারিয়েছে প্রায় প্রত্যেকেই এর আগে নাকি প্রায় ১০০ বছর আগে এমন মহামারি ( Corona Pandemic ) হানা দিয়েছিল ধরিত্রীর বুকে। সে যাই হোক। গোটা ২০২০ সাল থেকে ২১ সাল, এই বিশ্বের প্রতিটি মানুষের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে এক ভয়ঙ্কর সময়। পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গিয়েছে বহু মানুষ। যাদের শেষ কৃত্যে এসে দাঁড়িয়েছে তাদেরই পরিবার-পরিজনরা। কিন্তু এমনও অনেকে ছিলেন যাদের একূল-ওকূল কেউই  নেই। এই যান্ত্রিক পৃথিবীর জনসমুদ্রে সে একেবারেই একা। নিঃসঙ্গতায় কেটেছে সময়, মৃত্যুর পরও পায়নি কাউকে। হয় তো এটা বলা ভুল, কারণ ফিরে যাওয়া সেই পুরানো প্রবাদটায় ‘যাঁদের কেউ নেই, তাঁদের শালু আছে।’ 

corona death1

মৃত্যুর পর যাদের দেহ নিতে কেউ আসে না, বা কোনও দাবিদার থাকে না, এমনই বেওয়ারিশ লাশের শেষযাত্রার ব্যবস্থা করেন শালু। শালু সৈনি। উত্তরপ্রদেশের ( Uttar Pradesh ) মুজফফরপুরের বাসিন্দা সে। পেশা বলতে সমাজকর্মী ( Social Worker )। সংবাদের শিরোনামে তাঁর আসা একুশের  মহামারি পর্বে। গোটা দেশ যখন করোনার লাল চোখে একেবারে শিউরে। রাজ্য জুড়ে মৃত্যু মিছিল লেগে। ওই সময় এমন বহু মানুষই মারা গিয়েছিলেন যাদের নেই কোনও পরিবার-পরিজন কিংবা থাকলেও তাদের দেহ নিতে আসেনি কেউই। নিজের হাতে সেই সব বেওয়ারিশ লাশের অন্ত্যেষ্টি করেছিলেন শালু। 

তাঁর কথায়, “ওই সময় যখন নিজের লোকেরাই করোনায় মৃতদের দেহ নিতে অস্বীকার করেছিল, তখন আমি তাদের দেহ সৎকারের ভার নিজের হাতে নিই।” এখনও পর্যন্ত ৫০০-এর বেশি বেওয়ারিশ লাশের শেষকৃত্য করেছেন শালু। 

তাঁর নিজস্ব একটি সমাজসেবী সংস্থা রয়েছে। সেই সংস্থায় রয়েছেন পাঁচজন সদস্য। নিজেদের খরচেই বেওয়ারিশ লাশগুলির শেষকৃত্য করে থাকে শালুর এই সমাজসেবী সংস্থা। তিনি জানান, পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এই কাজ সম্ভব হত না। বিভিন্ন থানা থেকে তাঁকে বেওয়ারিশ কোনও লাশ এলেও খবর দেওয়া হয়। শালুর কথায়, “আমাদের সমাজে মহিলারা শেষকৃত্য করছেন এমনটা দেখা যায় না। সেখানে দাঁড়িয়ে এই কাজ করায় নানা আলোচনা হয়। কিন্তু সে সবে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের কাজ করতেই স্বচ্ছন্দবোধ করি।”




Back to top button