Narendra Modi blunders- এক দশকে সেরা ১০টি ভুল মোদী সরকারের
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর(prime minister) ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নরেন্দ্র মোদী একাধিক বৃহত্তর পদক্ষেপ নিয়েছেন যার মধ্যে ডিমনিটাইজেশন(demonetization) থেকে শুরু করে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ প্রভৃতি অনেক কিছুই রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক মহল(international) থেকে শুরু করে বিরোধীপক্ষ, প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বারবার। প্রায় এক দশকের শাসনে মোদীর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত(decision) ভুল এবং অগণতান্ত্রিক(undemocratic) প্রমাণিত হয়েছে। রইলো এমনই দশটি ভুলের খতিয়ান যা আরেকবার চিনিয়ে দেয় মোদী সরকারের স্বরূপ।
ডিমনিটাইজেশন(demonetization)
ক্ষমতায় এসে মোদী সরকারের প্রথম বড় পদক্ষেপ ছিল ডিমনিটাইজেশন(demonetization) যেখানে রাতারাতি পুরোনো পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট বিলুপ্ত হয়ে নতুন পাঁচশো এবং দুহাজার টাকার নোটের প্রচলন হয়। বলা বাহুল্য এই নীতি বাজারে কালো টাকা(black money) এবং জাল টাকার(false note) রমরমা রুখতে নেওয়া হলেও আদতে সাধারণ মানুষের হয়রানি ছাড়া রাষ্ট্রের কোন উপকারই হয়নি। উপরন্তু আচমকা ধাক্কায় দেশের অর্থনীতি(economy) টালমাটাল হয়ে যাওয়ায় কমে যায় চাকরির সুযোগ।
কৃষক আত্মহত্যা
মোদি সরকারের আমলে কৃষকের আত্মহত্যার হার বেড়েছে। মোদি সরকার কোনোরকম চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনা ছাড়াই গম এবং ডাল আমদানি করেছে যার ফলে দেশীয় পণ্যের দাম কমে গেছে। তাছাড়া বাজেটে(budget) প্রকাশিত ফসলের ন্যুনতম সাধারণ মূল্য সম্পর্কিত নীতি যথেষ্ট অখুশি করেছে কৃষকদের।
রাফায়েল বিতর্ক(Rafael debate)
২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে রাফায়েল জেট(Rafael Jet) কেনার জন্য নির্ধারিত ক্রয় পদ্ধতির যে নির্দিষ্ট চুক্তি তার শর্তাবলী না মেনে সম্পূর্ণ নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে ১২৬টির বদলে ৩৬টি যুদ্ধবিমান কেনা হয়। এরপরেই বিরোধীরা দুর্নীতির প্রশ্নে মোদী সরকারকে বিদ্ধ করতে শুরু করলে তারা সরাসরি বিরোধী আক্রমণকেই বেছে নেন ঢাল হিসেবে। ফরাসী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একটি ভারতীয় চ্যানেলে সাক্ষাতকারের সময় এই বিরোধী আক্রমণ শুরু হয়। পাশাপাশি অফসেট পার্টনার(offset partner) হিসেবে একটি প্রাইভেট পার্টির নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রেও কোনরকম যোগ্যতা নয় বরং একমাত্র মোদী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাই প্রধান ফ্যাক্টর(prime factor) ছিল এমনটাই অভিযোগ বিরোধীদের।
সংবাদ মাধ্যমের কন্ঠরোধ
সংবাদ মাধ্যমকে নিজের করায়ত্ব করা মোদী সরকারের অন্যতম একটি নিন্দনীয় পদক্ষেপ। সাধারণত জাতীয় স্তরে সংবাদ মাধ্যমগুলির মধ্যে বেশ কিছু সংবাদ সংস্থা একপ্রকার ভৃত্যে পরিনত হয়েছে মোদী সরকারের। তারা বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রীর কোনরকম সমালোচনা দেখলেই যেকোন উপায়ে সেগুলির কন্ঠরোধ করে। যদি কোন সংবাদ মাধ্যম সংস্থা এর অন্যথা করে তবে সেই সংস্থাকে চব্বিশ ঘন্টা কালো তালিকাভুক্ত(black listed) করা, অফিসে রেইড(raid) করা এই ধরনের একনায়কতান্ত্রিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংস্থার রিপোর্টারদের(reporter) বদলি অথবা বরখাস্তের নির্দেশও দেওয়া হয়।
প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হবার পরই প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা বারবার প্রকাশ পেয়েছে নরেন্দ্র মোদীর একাধিক কাজে। গত সাত বছরে প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে যেকোন প্রশ্নোত্তর পর্বে খুবই অল্প সময়ে দেখা গেছে। তুলনায় নির্বাচনী প্রচারে তার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য ভাবে অনেক বেশি। তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী হবার পরেই নিজের ওপর থাকা সমস্ত ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করেন তিনি। এছাড়াও লোকপাল বিলের প্রসঙ্গ এত সূচারুভাবে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে সুপ্রিম কোর্ট(Supreme court)এতে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার কথা বলেও নির্বাচনী বন্ড(electoral bond) কেনার ক্ষেত্রে হিসাবের গরমিলের ঘটনাও ঘটেছে এই সরকারের আমলে।
হিংসায় উষ্কানি
দলিত এবং সংখ্যালঘুদের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ মোদী সরকারের অন্যতম ব্যর্থতা। এই আক্রমণকারীদের প্রতি বিজেপি সরকারের মন্ত্রীদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন বা সুসম্পর্ক পরোক্ষে এই বার্তাই দেয় যে এই আক্রমণ সরকারের মদতপুষ্ট। পাশাপাশি তীব্র সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সুসম্পর্ক সাম্প্রদায়িক হিংসাকেই সরকারি শিলমোহর দেয়।
কাশ্মীর পরিস্থিতি
মোদী সরকারের ৩৭০ ধারা বিলোপের মাধ্যমে কাশ্মীরকে গোটা ভারতের থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার কৌশল সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে কাশ্মীরকেই। এর ফলে ১৯৯৬ সালের পর প্রথমবার উপনির্বাচন সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি টানা আটমাসব্যাপী কারফিউয়ের(curfew) ফলে ধ্বংস হয়ে যায় কাশ্মীরের অর্থনীতি। তাছাড়া বিজেপি সরকারের শাসনের তিনবছরের মধ্যেই ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে শহীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
করোনা পরিস্থিতি
২০২০ সালে সারা পৃথিবীতে করোনার প্রকোপ দেখা দিলে আশা করা হয়েছিল মোদী সরকার তৎপরতার সঙ্গে ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু পরিবর্তে লকডাউনের(lockdown) মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর থালা ও শাঁখ বাজানোর নির্দেশ মূল সমস্যা থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা ছাড়া কিছুই ছিলনা। পাশাপাশি, লকডাউনের মধ্যে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু মোদী সরকারকে দাঁড় করায় প্রশ্নের মুখে। কোভিড চিকিৎসার প্রয়োজনীয় টিকার(vaccine) আমদানি নিয়েও একাধিক দুর্নীতি দেখা গেছে।
কৃষক বিদ্রোহ
মোদী সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা তিনটি কৃষিবিল (farm bill)সম্পর্কিত কৃষক আন্দোলন। প্রায় একবছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সর্বভারতীয় কৃষক আন্দোলনের চাপে অবশেষে গতকাল কৃষি বিল প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী। যদিও এই আন্দোলন রোধ করতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি বিজেপি সরকার। অনশনরত কৃষকের গায়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এই আন্দোলন রুখতে। গত একবছরে প্রায় পাঁচশোরও বেশি কৃষক শহীদ হয়েছেন দিল্লীর সিংঘু বর্ডারে প্রচন্ড ঠান্ডায় আন্দোলন চালাতে গিয়ে। আন্তর্জাতিক স্তরেও এই কৃষক আন্দোলন নিন্দার মুখে ফেলেছে বিজেপি সরকারকে।
চাকরি
মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের জিডিপি(GDP) ক্রমশই তলানিতে নেমেছে। এর ফলে একদিকে যেমন চরমে উঠেছে পেট্রোপন্য সহ একাধিক দৈনিক সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, তেমনই সংখ্যায় কমেছে চাকরি। পাশাপাশি একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থার বেসরকারিকরণের(privatization) ফলে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির বাজার নেহাতই অপ্রতুল।