কোভিডে নিভেছে শিক্ষার আলো, পড়ুয়া আত্মহত্যার নিরিখে গোটা বিশ্বে ভয় ধরাচ্ছে ভারত
কোভিড এবং লকডাউনের চোখরাঙানি পেরিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে দেশের পরিস্থিতি। আগামী ১৫ই নভেম্বর থেকে খুলছে স্কুল কলেজও। তবে দীর্ঘ একবছর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও কোভিড যথেষ্ট ক্ষতি করে দিয়েছে ছাত্র এবং যুবসমাজের এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বলাই বাহুল্য যে এই ক্ষতি মোটেই শুধুমাত্র শারীরিক ক্ষতি নয় বরং গভীর মানসিক ক্ষতি হয়ে গেছে পড়ুয়াদের।
স্বাভাবিক ভাবেই দীর্ঘ মানসিক অবসাদের প্রভাবে চাঞ্চল্যকর ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ভারতে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান। কেন্দ্রীয় আত্মহত্যা সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২০ সালে প্রায় গড়ে ৩৪ জন পড়ুয়া আত্মহত্যা করেছে। কোভিড পরিস্থিতিতে যদিও সব বয়সের ক্ষেত্রেই আত্মহত্যার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি তবে পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা যথেষ্ট চিন্তায় ফেলছে বিশেষজ্ঞদের।
কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা ভারতে গত একবছরে প্রায় ১২৫০০ জনের বেশি পড়ুয়া আত্মহত্যা করেছে। দৈনিক গড় হিসাবে সংখ্যাটা ৩৪ জনের আশেপাশে। এমনকি বেশ কিছু রাজ্যে দৈনিক গড় পড়ুয়া আত্মহত্যার সংখ্যা ১ এর চেয়ে বেশি। আর ২০১৯ সালের তুলনায় এই সংখ্যাটা বেড়েছে প্রায় ২১ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই এর পিছনে অতিমারীর প্রভাবকে মুখ্য বলে মেনে নিয়েছেন সমীক্ষকরাও। দেখা গিয়েছে, তালিকায় প্রথম ৬টি রাজ্যেই মোট শিক্ষার্থী আত্মহত্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে। এই ৬টি রাজ্য যথাক্রমে – মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটক। ৬৫৯৮ জন পড়ুয়া আত্মহত্যা করেছে ৬টি রাজ্য থেকে।
তবে মনোবিদদের মতে আত্মহত্যা করা পড়ুয়াদের মধ্যে আচমকা কোন শক নয় বরং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থেকেই আত্মহত্যার এই প্রবনতা দেখা যায়। অর্থাৎ আত্মহত্যা করা পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্য আগেই ভগ্ন ছিল। কোভিড এবং লকডাউন তাতে বাড়তি মদত যুগিয়েছে। সাধারণত স্কুল কলেজে সকল প্রকার মেধা এবং পারিবারিক অবস্থানের পড়ুয়াই একসঙ্গে ক্লাস করার সুযোগ পেতো। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে আর্থিক কারণে অনেক ছাত্রের পক্ষেই অনলাইন ক্লাসের পরিসেবা নেওয়া সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি অনলাইন ক্লাসে পড়া বুঝতে না পারলে তা পুনরায় জিজ্ঞেস করার সুযোগও কম থাকে ছাত্রদের পক্ষে। এছাড়াও প্রতিদিন সহপাঠীদের সঙ্গে মেলামেশা অনেক ক্ষেত্রেই মনের মেঘ কাটিয়ে দিতে পারে যা সম্ভব হয়নি কোভিডের কারণে।
সবমিলিয়ে ১৯৯৫ থেকে করা আত্মহত্যার পরিসংখ্যানে সবচেয়ে ওপরে থাকবে ২০২০র কোভিড পরিস্থিতির নাম। পঁচিশ বছরে ভারতে মোট আত্মহত্যা করা পড়ুয়ার সংখ্যা ১.৮ লক্ষ। অতিমারি পেরিয়ে রোজকার স্বাভাবিক ছাত্রজীবনে প্রবেশ করলে আত্মহত্যার এই প্রবণতা কমবে এমনটাই আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।