Woman Assaulted- বাড়ছে মহিলা নিগ্রহ, “বৌ পেটানোর” তালিকায় পিছিয়ে পড়েনি পশ্চিমবঙ্গ
“রাতের বেলা মদ খেয়ে বৌ পেটানো”-এই বাক্যটা আমরা নিজেদের গোটা জীবনে বহুবার শুনেছি, বহুবার দেখেছি। এবার প্রশ্ন হল এই বৌ পেটানো কি ঠিক? এই প্রশ্নের জবাবে, এক অংশের মানুষের ধারণা এটা “ছোটলোক” শ্রেণির কর্ম এবং তা উচিত নয়। কিন্তু এক সরকারি সমীক্ষায় উঠে আসছে এক অন্যরকমেরই তথ্য। তেলেঙ্গানার ৮৩.৮ শতাংশ মহিলার বক্তব্য, “বৌ পেটানো ঠিক”। সমীক্ষার ভিত্তিতে জানা গিয়েছে, এই বিষয়ে মেয়েদের মধ্যে হ্যাঁ-এর বিচারে শীর্ষে তেলেঙ্গানা। পাশাপাশি, পুরুষদের মধ্যে সবার আগে কর্নাটক। এই দক্ষিণী রাজ্যের ৮১.৯ শতাংশ পুরুষের মতামত, স্বামী যদি স্ত্রী’কে মারেন তাতে কোনো দোষ নেই! এই সমীক্ষা থেকে কিন্তু বাদ পড়েনি পশ্চিমবঙ্গের নাম। পশ্চিমবঙ্গ সহ ১৩টি রাজ্যে এই সমীক্ষায় আসা মহিলারাই মনে করছেন, শ্বশুরবাড়ির লোকেদের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করাটাই স্বামীর হাতে নিগ্রহের প্রধান কারণ।
উল্লেখ্য, জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষার সাম্প্রতিক প্রকাশিত ফলাফল এখন গোটা দেশজুড়েই একটি বহুল চর্চিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমীক্ষায় দেখা গেছে, শহরাঞ্চলে ৮০.৯ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে ৭৭.৪ শতাংশ মহিলা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছেন। এছাড়াও, দেশে মহিলাপিছু শিশু জন্মহার নেমে এসেছে দুইয়ে। জন্মহারে এগিয়ে শিশুকন্যারা। তা সত্ত্বেও মহিলাদের একাংশ স্বামীর হাতে স্ত্রীয়ের নিগ্রহকে সমর্থন জানাচ্ছে। এবং যা দেশের ক্ষেত্রে তৈরি করছে এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতি।
২০১৯-২০২১ সালের মধ্যে এ বারের সমীক্ষাটি হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ, অসম, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, গোয়া, গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ, কর্ণাটক, কেরল, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, তেলেঙ্গানা, ত্রিপুরা এবং কেন্দ্রশাসিত জম্বু ও কাশ্মীরে। কেন্দ্রীয় সমীক্ষকেরা প্রশ্ন রেখেছিলেন, “স্বামী যদি স্ত্রীকে আঘাত করেন বা মারধর করেন, আপনার মতে কি তা যুক্তিসংগত ?”- এই প্রশ্নের জবাবে দেখা যাচ্ছে, হ্যাঁ- এর শতকরা হিসাবে পুরুষদের মধ্যে কর্ণাটক এবং মহিলাদের মধ্যে তেলেঙ্গানা শীর্ষে। দুই তালিকাতেই সবার শেষে রয়েছে হিমাচল প্রদেশ। সেই রাজ্যে মাত্র ১৪.২ শতাংশ পুরুষ এবং ১৪.৮ শতাংশ মহিলা মনে করেন কাজটা “ঠিক”। মহিলাদের “হ্যাঁ” তালিকায় বেশ উপরের দিকে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ(৮৩.৬ শতাংশ), কর্ণাটক(৭৬.৯ শতাংশ), মণিপুর(৬৫.৯ শতাংশ) এবং কেরল(৫২.৪ শতাংশ)। পুরুষদের মধ্যে সমীক্ষায় এক্ষেত্রে শেষের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা(২১.৩ শতাংশ)।
ঠিক কোন কোন কারণের পরিপ্রেক্ষিতে একাংশের মানুষের মনে হচ্ছে মহিলা নিগ্রহ ঠিক- এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে সমীক্ষকরা দেখেন, সম্ভাব্য সাতটি কারণে ভিত্তিতে মানুষের এই ধারণা। ভারতের সমাজে মহিলা নিগ্রহের সমস্যা চলে আসছে চিরকাল ধরে। এই পরিস্থিতি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, মহিলার নিগ্রহের কারণ হিসাবে প্রথমেই রয়েছে স্বামীকে না বলে বাইরে যাওয়া। পাশাপাশি, সংসার বা সন্তানদের অবহেলা করা এবং স্বামীর সঙ্গে তর্ক করাও একটি গুরুত্বর কারণ হয়ে উঠছে মহিলা নিগ্রহের। একইসঙ্গে, স্বামীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে না চাওয়া, ভালো রান্না করতে না পারা এই সব কারণও পুরুষদের মধ্যে উস্কানি দিচ্ছে বৌ পেটানোর। এছাড়াও, স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক আছে বলে স্বামীর সন্দেহ করা ও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের ‘অশ্রদ্ধা’ করা।
আরও পড়ুন……Tripura Polls: গেরুয়া ঝড়ে বেকাদায় বিরোধীরা, ফের ‘বিল্পবেই’ ভরসা ত্রিপুরাবাসীর
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ সহ ১৩টি রাজ্যের মহিলাদের ধারণা শ্বশুরবাড়ির লোকেদের ‘অশ্রদ্ধা’ করাই গার্হস্থ হিংসার অন্যতম কারণ। দ্বিতীয় কারণ হিসাবে উঠে এসেছে সন্তানদের অবহেলা করা। তবে এই তালিকায় সবার নীচে রয়েছে পরকিয়া সন্দেহ। কিন্তু মিজোরামের মহিলাদের মতে, সেটাই প্রধান কারণ। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষার আগের রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল, সারা দেশে ৫২ শতাংশ মহিলা এবং ৪২ শতাংশ পুরুষ গার্হস্থ হিংসাকে যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন। আর সাম্প্রতিক সমীক্ষায় সেই শতকরা আশির ঘরে পৌঁছেছে। অবশ্য এই সমীক্ষায় উঠে আসা মহিলা নিগ্রহের কারণগুলির বাইরেও আরও বেশ কিছু কারণ “বৌ পেটানো”-কে উস্কে দেয়। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, পণ নেওয়া এবং বিয়ের পরও মেয়ের বাপের বাড়ির কাছে একাধিক জিনিসের দাবি করা এবং কোনো পরিস্থিতিতে তা না পাওয়া দেশে মহিলা নিগ্রহকে উস্কে দেয়। এছাড়াও, নিজের বাড়ির বৌ-কে নিজের হাতের মুঠোয় রাখা কিংবা বলা চলে নিজেদের পুরুষত্ব এক অন্য হিংসাত্মক আঙ্গিক থেকে জাহির করাও মহিলা নিগ্রহের একটি মূল কারণ।