জীবন যেন নাট্যমঞ্চ! এককালের খ্যাতি ধুলোয় মিশে আজ ভিক্ষুক তিলোত্তমার এই খ্যাতনামা অভিনেত্রী

ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ছোট্ট স্ক্রিনের মাঝে হারিয়েছে মানুষের একটি বড় অভ্যাস। আগে ছুটির দিন মানেই পরিবার চলল থিয়েটার দেখতে। সে যেন এক অন্য রকম অনুভূতি। কিন্তু সে সব কোথায়? মানুষ হারিয়ে গিয়েছে হাতের ছোট্ট যন্ত্রটির ছোট্ট স্ক্রিনে। অবহেলায় পড়ে হারিয়েছে থিয়েটার, হারিয়েছে সেই অত্যন্ত দক্ষ কলাকুশলীরা। হ্যারিকেনের শেষ আলোটার মতো শহরের কোনও কোনও জায়গায় এখনও থিয়েটারের চলে রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে থেকে হারিয়ে গিয়েছেন অনেক কলাকুশলীরা। কেউ ভুগছে অভাবে, কিংবা কেউ ক্যারিয়ারে গতি আনতে এগিয়ে গেছেন অনেক দূরে। 

থিয়েটারকে নিজের জীবনের সব করে যতটা সুখ পেয়েছেন কলাকুশলীরা, ততটা কিন্তু জোটেনি অর্থ। যেমন, একসময়ের নামজাদা যাত্রা থিয়েটারের অভিনেত্রী। আজ সবকিছু হারিয়ে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এক সময় শত সহস্ত্র মানুষ যাকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানাতে তিনি এখন সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব। কলকাতার নামী দামী যাত্রা পালায় যাকে অভিনেত্রীর ভূমিকায় দেখা যেত তাঁর ঠাই এখন আরামবাগের ভবঘুরে ভবনে। যে শিল্প সত্তার জন্য অভিনেত্রীকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল সেই শিল্প ও তার স্টেজ এখন শিল্পী রমা মুখার্জীর স্মৃতি চারণ। 

tbc exclusive

রমা মুখার্জী বিখ্যাত নাম ছিল যাত্রা জগতে। একসময় তার অভিনয় দেখতে গ্রাম-গঞ্জ থেকে হাজার হাজার যাত্রা প্রিয় মানুষ ছুটে আসতেন মঞ্চের টানে। কলকাতার বেশ কয়েকটি  যাত্রা কোম্পানিতেও মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যেত এই অভিনেত্রী রমা মুখার্জীকে।  হুগলির গোঘাট এর বাসিন্দা ছিলেন তিনি।  বর্তমানে ভিক্ষায় তার একমাত্র জীবন ও জীবিকা হয়ে উঠেছিল। অসহায় এই যাত্রাশিল্পীর দিন কাটে অনিদ্রায় ও অনাহারের ভবঘুরের মতন। জীর্ণশীর্ণ চেহারার এই বৃদ্ধা একসময় যৌবনকালের দিকবিদিক কাঁপিয়ে এসেছেন। কিন্তু আজ তিনি একা নিঃস্ব শুন্য। আরামবাগের স্টেশনের ধারে তাকে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। অভিনেত্রীর এহেন অবস্থার কথা আরামবাগ পুরসভার চেয়ারম্যান সমীর ভান্ডারীর কাছে পৌঁছাতে তিনি নিজেই তাকে সযত্নে তুলে নিয়ে আসেন। যাবতীয় ব্যবস্থা করে দিয়ে স্থায়ী ঠিকানায় পৌঁছে দেন তিনি। পুরসভা পরিচালিত ভবঘুরে ভবনে তাকে আশ্রয় দেওয়া হয় আর এখানেই তিনি থাকবেন বাকি জীবনটা এখানেই কাটাবেন বলে জানিয়ে দেন চেয়ারম্যান সমীর ভান্ডারী তার খাওয়া-দাওয়া চিকিৎসাসহ সব দায়িত্বভার তুলে নিয়েছে আরামবাগ পৌরসভা। 

রমা দেবী জানান, তার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে নেমে আসে তার জীবনে ঘোর অন্ধকার। কেউ পাশে থাকেনি তাঁর। হুগলির কামারপুকুর এলাকায় থাকতেন তিনি। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে ভিক্ষা করছিলেন তিনি। ভবঘুরে ভবনে তাকে নিয়ে আসার পর থেকে তার কিছুটা শুরু হলেও তিনি জানিয়েছেন বাকি জীবনটা তিনি এখানে কাটিয়ে দেবেন। 




Leave a Reply

Back to top button