Mumbai attack- মুম্বাই হামলার ১৩ বছর অতিক্রান্ত, ধর্মের লড়াইয়ে এখনও মেতে নির্লজ্জ পাকিস্তান
১৩ বছর অতিক্রান্ত! মুম্বাই হামলার (Mumbai Attack) ১৩ বছর অতিক্রান্ত। আসলে হামলা মুম্বাইয়ে নয়, হামলা করা হয়েছিল ভারতবর্ষের (India) হৃদয়ে। ২০০৮ সালের ২৬ শে নভেম্বর, দশজন পাকিস্তানী (Pakistani) ভারতে ঢুকে অমানবিক সন্ত্রাস চালাল। ১৬৬ জন মারা (dead) গেলেন সঙ্গে ৩০০ এর বেশি আহত (injuried)। ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস রেলওয়ে স্টেশন, নরিমান হাউস কমপ্লেক্স, কামা হাসপাতাল, লিওপোল্ড ক্যাফে, ওবেরয়-ট্রাইডেন্ট হোটেল এবং তাজ হোটেল থেকে ভেসে এসেছিল সাধারণ নিরপরাধ মানুষের কান্নার তীব্র শব্দ।
অবশেষে ৯ জন হামলাকারীকে প্রতিহত করা হয়। কনস্টেবল (constable) অরুণ যাদবের বুদ্ধিমত্তা আর পুলিশ অফিসার তুকারাম ওম্বলের অসীম সাহসিকতায় ধরা পড়ে একজন হামালাকারি (terrorist) ‘আজমল কাসাব’। এই হামলাই ভারত সরকারকে (Indian Government) চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল, সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এরপর ভারত সত্যিই অনেক সচেতন হয়েছে। বাড়িয়ে তুলেছে সুরক্ষা কবজ। কিন্তু আপনি কি জানেন, ২০০৮ সালের ২৬ শে নভেম্বরে প্রতিবেশী তথাকথিত বন্ধু দেশে (Friendly Nation) এই নিঃসংশতার নিদর্শন দেখে পাকিস্তানের সরকার তার দেশের ভিতরে কোন কোন পদক্ষেপ নিয়েছিল?
২৬ শে নভেম্বর সকালেই পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘শাহ মাহমুদ কুরেছি’ নিরাপত্তা সহযোগিতায় উড়ে আসেন দিল্লিতে। পাকিস্তান এবং ভারতের পারস্পরিক সৌহার্দ বিনিময় ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কথাই ছিল এই আগমনের কারণ। এই হামলার পরই নাকি পাকিস্তানের মনে হয়েছিল নাশকতা দমনে ভারত পাকিস্তানকে একসাথে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এদিকে ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধ পরই দুই প্রতিবেশী দেশকেই একটি যৌথ নিরাপত্তা কমিটি গঠনের উপদেশ দিয়েছিল আমেরিকা। অথচ কোন এক জানা কিন্তু অজানা কারণেই সেই কমিটি আজও তৈরি হয়নি।
আরও পড়ুন- ফের মহিলাদের উপর নিষেধাজ্ঞা, হিজাব পড়েই করতে হবে সংবাদ পাঠ
এই হামলার পর পাকিস্তানের খুব স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘এই হামলাকারীর কেউই পাকিস্তানের নাগরিক নন। কিন্তু তারা সবসময় ভাইয়ের মত ভারতের পাশেই আছেন’। কিন্তু ২০০৯ এ ভারত যখনই চিৎকার করে নাশকতা বিনাশের বিশ্বমঞ্চে জানাল, ‘২৬/১১ কোন একটি রাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া ঘটান সম্ভব নয়’। তাতেই পাকিস্তানের উপর এসে পড়ল প্রবল আন্তর্জাতিক চাপ। আর কয়েকদিনের মধ্যে, ইসলামাবাদ কাসাবকে পাকিস্তানি নাগরিক বলে স্বীকার করে একটি কটু বিবৃতি জারি করে। কিন্তু এত প্রবল হামলার উত্তর শুধুমাত্র একটি বিবৃতি?
এখানেই শেষ নয়। এরপর আজমলের ফাঁসির আদেশ হলে, আজমল নাকি ভারতে অবস্থিত পাকিস্তানি হাই কমিশনকে একটি চিঠি লেখে। এই চিঠিতে সে তার জন্যে আইনি সাহায্য চায়। কিন্তু ভারতীয় প্রবীণ সাংবাদিক কাড়ান থাপারের সাথে এক ইন্টার্ভিউতে পাকিস্তানের তৎকালীন হাই কমিশনার ‘আব্দুল বাসিত’ জানিয়েছিলেন সেই চিঠি নাকি পাকিস্তান হাই কমিশনের টেবিল পর্যন্ত কোনদিনই এসেই পৌঁছায়নি। আর তাছাড়াও যেহেতু আজমলের কাছে পাকিস্তানের নাগরিক হবার কোন প্রমাণপত্র ছিল না তাই সেই চিঠি এসে পৌঁছালেও তারা কোনরকম সাহায্য করতে পারত না। কিন্তু আবার পাকিস্তানের ডন সংবাদপত্রের মতে, পাকিস্তানে আজমলের বাবা স্বীকার করেছিলেন, সিএসটি রেলওয়ে স্টেশনের ছবিতে দেখা ব্যক্তিটি প্রকৃতপক্ষে তারই ছেলে। তবে হাইকমিশনার বলেছিলেন, “এমন কিছু প্রমাণ দরকার যা যুক্তিযুক্ত…”
তবে ২৬/১১ এর পর পাকিস্তানে যে আন্তর্জাতিক চাপের সৃষ্টি হয়, তাতে নাকি কিছু উগ্রপন্থী সংগঠনের উপর নিষেধাজ্ঞা (ban) জাড়ি করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু যে সংঘটনকে এই মুম্বাই হামলার জন্য দায়ী করা হয়, ‘লস্কর-ই-তইবা’, তা তো আগে থেকেই পাকিস্তানে নিষিদ্ধই ছিল। তাহলে? যদিও ২৬/১১-এর এই হামলা শুধু ভারত নয়, সারা পৃথিবী জুড়েই নিরাপত্তা ব্যবস্থার কাঠামো বদলে দিয়েছিল। তার পর থেকেই সন্ত্রাস দমন যে কোনও শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অন্যতম অঙ্গ হয়ে উঠেছে। মুম্বাই হামলার পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই লস্কর-ই-তইবাকে বেআইনি ঘোষণা করে। যদিও এই সংগঠনের প্রাণপুরুষ বহাল তবিয়তেই আছে পাকিস্তানের আশ্রয়ে।
সারা পৃথিবীতে নাশকতার মান বিচার করতে গেলে আজও উঠে আসবে, বাবা-মাকে চোখের সামনে মরতে দেখা সেই ছেলেটার কথা, এক পায়ে গুলি লেগে সারাজীবনের জন্যে হাটতে না পারা সেই মেয়েটার কথা, সেই পুলিশদের কথা যারা বিনা দ্বিধায় দেশবাসীকে রক্ষ্যা করার জন্যে এগিয়ে গিয়েছিল মৃত্যুর দিকে। আর উঠে আসবে ধর্মের নামে অন্ধ করে দিয়ে কিভাবে কোনও মান-হুস-ওয়ালা মানুষকে পশুর থেকেও হিংস্র করে তোলা যায়! আজ সেই ২৬/১১ এর বর্ষপূর্তি যা পৃথিবীকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল ধর্মের নামে কতটা হিংস্রতা হতে পারে! মানুষ মানবিকতাকে হত্যা করতে পারে ধর্মের নামে। কিন্তু এই ধর্মের নামে অনাচার আজও কি আদেও বন্ধ হয়েছে, নাকি একটি ধর্মকে দেখে অন্যান্য ধর্মের ধ্বজাধারীরাও সজাগ হয়ে উঠছে? প্রশ্ন করার সময় এসেছে, ভেবে দেখার সময় এসেছে।