Republic Day of 2022 : গোটাটাই মুখোশ, দিন প্রতি দিন ক্ষুণ্ণ হচ্ছে ভারতের গণতন্ত্র

আজ ২৬ জানুয়ারি, প্রজাতন্ত্র দিবস। দেশ ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করলেও আসল স্বাধীনতার স্বাদ মিলেছিল ১৯৫০-এর ২৬ জানুয়ারি। আসলে সেই দিনই গঠিত হয়েছিল ভারত। সেই দিনই ভারত বিশ্ব দরবারে হয়ে উঠেছিল বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু, আজ প্রজাতন্ত্র দিবসের ( Republic Day of 2022 ) ৭৩তম বার্ষিকীতে একটি প্রশ্ন নানা ভাবে মাথা চাগাড় দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। তাহল, আদতেই কী আমরা সেই বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের শিরোপাকে নিজেদের মাথায় এখনও ধরে রাখতে পেরেছি? নাকি দিন শেষে গলা টিপে খুন করেছি গণতন্ত্রকে?
গতবছরের মার্চ মাস নাগাদ একটি সমীক্ষা হটাৎই নাড়া দিয়ে দেয় বিশ্ববাসীকে। প্রকাশ্যে আসে বিশ্বের সকল দেশের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর হাল। আর সেই সমীক্ষা থেকে বাদ পড়েনি আমাদের দেশও। সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি-ডেম নামক এক স্বাধীন গবেষণা সংস্থা এই সমীক্ষাটি করে।
এই সমীক্ষায় ভারতের ক্ষেত্রে উঠে আসে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। তথ্যানুযায়ী, দিন প্রতি দিন ভারতের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়ছে। তৈরি হচ্ছে এক নতুন ভারত। যা কোনও দিক থেকে গণতান্ত্রিক নয়, তার রূপ একজন স্বৈরাচারীর। অর্থাৎ, সহজ ভাষায় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র থেকে স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে আমাদের দেশ।
উল্লেখ্য, নিজেদের বন্দি জীবন থেকে বেরিয়ে বাইরের জগতের দিকে তাকালেই এই সমীক্ষার উদাহরণ মিলবে একের পর এক। ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি এই সমীক্ষায় খুব স্পষ্টভাবেই জানানো হয়েছে, দিন প্রতি দিন ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ থেকে পরিণত হচ্ছে স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে। যার জেরে ভারতের মানুষ হারাচ্ছে তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার।
বলে রাখা ভালো, এই সমীক্ষার প্রকাশিত হওয়ার কিছুদিন আগেই মার্চ মাসের একদম শুরুতেই আরও একটি রিপোর্ট আসে বিশ্বের সামনে। মূলত “ফ্রিডোম হাউস” নামে তৈরি একটি মার্কিন এনজিও-এর রিপোর্ট ফের চমকে দেয় বিশ্ববাসীকে। ভি-ডেম-এর সমীক্ষার মতোই সেই সমীক্ষায়ও উল্লেখ করা হয় বিশ্বের প্রতিটি দেশের লোকতান্ত্রিক অধিকারের পরিসংখ্যান। যেখানে ভারতের ক্ষেত্রে সংস্থাটি লেখে, ‘ভারত বর্তমানে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র থেকে পরিণত হচ্ছে আধা-স্বাধীন বা আংশিক স্বাধীন রাষ্ট্রে।’
ভারতের মতোই বিশ্বের আরও বহু দেশের দিকে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ তোলে এই দুই সংস্থা। তবে গোটা বিশ্ব এই আলোচনার বিষয় নয়। বিগত কয়েক বছরে দেশের যে বেহাল পরিস্থিতি তা সকলেরই চোখের সামনে। করোনা পর্বে অর্থনীতি মাটি খুঁড়ে পৌঁছে গিয়েছে ভূপৃষ্ঠের নীচে। বিগত কয়েক বছরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির হালও একেবারে বেহাল। পরিবর্তন করা হয়েছে রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডার। ধর্মের উপর ভিত্তি করে উড়ালপুলের মসৃণ রাস্তা ধরে চলছে রাজনীতির চার চাকা। এই সড়কে নেই কোনও গর্ত, তবে উড়ালপুলেরই নীচে থাকা জনসাধারণের সড়ক পরিপূর্ণ গর্তে। চোখ নেই কারোর।
আরও পড়ুন…..Republic Day 2022 : দিল্লির আকাশে ট্যাবলোর সাথে কুচকাওয়াজ আনে উল্লাস, জেনে নিন ভারতের স্বর্ণ ইতিহাস
কারণ, জনগণের প্রতিনিধি এখন আর জনগণের কথা শোনে না। সে আসে তাঁর মনের কথা মানুষের কাছে বার্তা হিসেবে পৌঁছে দেয়, তারপর আবার ঢুকে পড়ে তাঁর বিলাসবহুল ঘরে। এই পরিস্থিতিতে কে শুনবে মানুষের কথা? দিনের পর দিন এক শ্রেণি ধনী থেকে আরও ধনী হচ্ছে, আরেকটা বড় শ্রেণি মাটির সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে। বেকারত্বের জ্বালা ঘুম কেড়েছে মানুষের। বৃদ্ধি পাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। কিন্তু হুঁশ নেই কারোর। শুধু রয়েছে গণতন্ত্র খুনের দাগ।