সংবাদপত্রের ডিজিটাল ডুব, ‘এই সময়ের’ বিজ্ঞাপনে ‘প্রতিদিনই’ আনন্দবাজারকে জোর টক্কর ‘বর্তমানের’
কালের নিয়মের সঙ্গেই সমঝোতা রেখে ক্রমেই বদলাচ্ছে মানুষের জীবনমান, বদলাচ্ছে চিন্তার পরিসর, ভাবনার আঙিনাতেও লাগছে নিত্য-নতুন রঙ। মানবজীবনের ‘সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং’ ক্রমেই দীর্ঘয়িত হওয়ার সাথে সাথে কালের কুঠুরিতেও ধরছে ঘুণ। ‘এক ঘরে’ থাকতে পছন্দ করছে এককালের ‘একঘরে’ হয়ে যাওয়া মানুষ গুলো। ক্রমেই যেন মানবজমিনের খনি খুঁড়ে আরও বেশি মাত্রায় উঁকি ঝুঁকি দিতে শুরু করেছে জীবনমুখী খবরের ভিড়। রোজ সকালের গরম চা আর নতুন কাগজের গন্ধ নেওয়া মানুষগুলোও কখন যে প্রাত্যহিকীর যাঁতাকলে পিষতে পিষতে মুঠোফোনের ‘ব্রেকিং নোটিফিকেশনে’ ডুব সাঁতার লাগাল সে খবর কেউ রাখল না। ফ্রন্ট পেজ হেডলাইন গুলো কখন যে ঝিকিমিকি টপ ব্যান্ড হয়ে উঠল তাও বিশেষ পাত্তা দিল না কেউই। তবে খবরই বিজ্ঞাপন(Advertisement), নাকি বিজ্ঞাপনই খবর সেই দ্বন্দ্ব চলতে থাকলেও এখনও দেশের অন্যান্য আঞ্চলিক সংবাদপত্রের খবরের মেজাজ, সার্কুলেশন এবং সর্বোপরি গুণমানে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বাংলার ‘প্রিন্ট ইন্ডাস্ট্রি’। আর সেই কারণেই ‘শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপন’ হোক বা ‘জমিজমা বিক্রি’, ‘সেরা জ্যোতিষী’ হোক বা ‘বশীকরণ’, ‘নিখোঁজের ডাইরি’ হোক বা ‘পাত্র-পাত্রী চাই’ সব কিছুতেই এই ডিজিটাল যুগে বাংলা সংবাদপত্রের জুড়ি মেলা ভার।
আরও পড়ুন- দমানো যাবে না লড়াই, ফেসবুকে বিজেপিকে হুঁশিয়ারি সায়নীর
তবে কোথায় বা কোন কাগজে বিজ্ঞাপন দিলে ফল মিলবে দ্রুত সেই উত্তর পেতে অনেক সময়েই ধোঁয়াশায় পড়েন অনেকে। এদিকে প্রচার হোক বা পাঠক সংখ্যা এখনও বাংলায় সেরার তকমা রয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকার(Anandabazar Patrika) মাথায়। Indian Readership Survey-র শেষ সমীক্ষা বলছে বাংলায় বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রগুলির তালিকায় শীর্ষ স্থানে রয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা। বর্তমানে গোটা পশ্চিমবঙ্গে আনন্দবাজার মোট সার্কুলেশন(Circulation) দাঁড়িয়ে রয়েছে ১০ লক্ষের আশেপাশে। সামগ্রিক পাঠকের সংখ্যা ১ কোটি ২৩ লক্ষের কাছাকাছি। সংবাদ পরিবেশনে বস্তুনিষ্ঠতা, নির্ভীকতা ও ঔপনিবেশিক বিরোধী দৃষ্টিকোণ রাখার কারণেই বরাবরই জনমানসে নিজেদের একটি ‘ব্র্যান্ড ইমেজ’ তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে আনন্দবাজার।
এদিকে ১৯২২ সালেই প্রথম পথচলা শুরু আনন্দবাজার পত্রিকার। প্রাথমিকভাবে বর্তমান বাংলাদেশের যশোর জেলা থেকে তুষার কান্তি ঘোষ কর্তৃক এটি প্রকাশিত হত। প্রথমে তাঁর ঠাকুমার নামেই হয়েছিল নামকরণ। পরবর্তীতে এটির স্বত্বাধিকারী হিসাবে উঠে আসেন সুরেশ চন্দ্র মজুমদার। সম্পাদকের ভূমিকা নেন প্রফুল্ল কুমার সরকার। দুজনেই সেই সময়কার বিখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। শুরুতে এটি চার পৃষ্ঠার সান্ধ্য দৈনিক হিসাবে পথচলা শুরু করলেও, খ্যাতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা সাধারণ প্রাত্যহিকীর রূপ নেয়।
অন্যদিকে বর্তমানে আনন্দবাজারের পরেই বাংলার সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক হিসাবে খ্যাতি রয়েছে বর্তমান পত্রিকার(Bartaman Patrika)। ১৯৮৪ সালে প্রথম এই সংবাদপত্রের পথচলা শুরু বিখ্যাত সাংবাদিক বরুণ সেনগুপ্তের হাত ধরে। বর্তমানে শিলিগুড়ি, কলকাতা(Kolkata), বর্ধমান, ও মেদিনীপুর এই চার জায়গা থেকেই এই সংবাদপত্রের প্রচার ও প্রিন্টিংয়ের(Printing) পার্টগুলি দেখা হয়। Indian Readership Survey-র শেষ সমীক্ষা বলছে রাজ্যের বর্তমানের মোট সার্কুলেশন রয়েছে ৬ লক্ষের সামান্য বেশি। অন্যদিকে মোট পাঠকের সংখ্যা ৯০ লক্ষের উপরে। তাই বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে আনন্দবাজারের(Ananadabazar Patrika) ঠিক পরেই আপনার পছন্দ তালিকায় প্রাধান্য পেতে পারে বর্তমান পত্রিকা।
এদিকে ১৯৯২ সালে সাংসদ স্বপন সাধন বসুর হাত ধরে পথ চলা শুরু করে রাজ্যের আর এক বিখ্যাত দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন(Sangbad Pratidin)। বর্তমানে গোটা রাজ্যে প্রতিদিনের মোচ সার্কুলেশন রয়েছে আড়াই লক্ষের আশেপাশে। অন্যদিকে বিখ্যাত দৈনিক তালিকায় অবশ্যই নাম করতে হয় আজকাল(Ajkal Patrika) পত্রিকার। এই সংবাদপত্রের পথচলা শুরু ১৯৮১ সালে বিখ্যাত সাংবাদিক অভীক কুমার ঘোষের হাত ধরে। কলকাতা ও শিলিগুড়ি থেকেই মূলত এই সংবাদপত্রের দুটি সংস্করণ বের হয়। অন্যদিকে ত্রিপুরায় আগরতলা থেকে বের হয় আরও একটি এডিশন। বর্তমানে ৩০ লক্ষের বেশি মানুষ প্রত্যহ এই সংবাদপত্র পড়ে থাকে। তালিকায় রয়েছে টাইমস গ্রুপের(Times Group) এই সময়ের(Ei Samay) নামও। বর্তমানে গোটা রাজ্যে ২৮ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ এই সংবাদপত্র পড়ে থাকে।