শান্ত, নির্লিপ্ত হলুদ বাড়ি, বছর পঞ্চাশ আগের সেই ধর্ষিতা আজও বেঁচে জানে না মানুষ

হলুদ রঙের বাড়িটিতে পড়েছে সময়ের ছাপ। চারপাশের ধূসরতা যেন প্রতিদিন গ্রাস করছে সেই বাড়িটিকে। শান্ত, নির্লিপ্ত একটা পরিবেশ। আর তার মধ্যেই বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে চলেছেন বছর ষাটের মাথুরা (Mathura)। এই নামটা আজও সেই এলাকায় নতুন কারণ, মানুষ তাঁকে চেনে অন্য এক নামে। তাঁর জীবনের প্রতিটা পাতায় বর্ণিত যুদ্ধ কাহিনী। সমাজে(Society) বেঁচে থাকার যুদ্ধ। এক সময় যে মেয়েটির জন্য গর্জে উঠেছিল গোটা দেশ। আজ পৃথিবীর বুকে থেকেও অচেনা-অজানা সে। মানুষ তাঁকে চেনে নতুন নামে, নতুন পরিচয়ে।
সাল ১৯৭২, আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে সদ্য স্বাধীন ভারতের(Independent India) বুকে সমাজ ও মানুষের রক্ষাকর্তা পুলিশের(Police) হাতেই ধর্ষণ হন মাথুরা। গাধচিরোলি জেলার দেশাইগঞ্জ থানার হেড কনস্টেবল ও তার সহকর্মী গণধর্ষণ করেন সেই এলাকার মাথুরা নামের এক কিশোরীকে। রক্ষকের এই ভক্ষক মুর্তিতে পারদ চড়ে এলাকায়। দায়ের হয় মামলা। বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চে শুনানি চলে। গোটা ঘটনায় সেই থানার দুই পুলিশ কর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। বিচারবিভাগের রায়ে খুশি হয়েছিল কিশোরী। কিন্তু ঝড়ের আগে সব কিছু যেমন শান্ত হয়ে যায়, কিশোরীর জীবনও হয়ে উঠেছিল সেই রকম শান্ত, নির্লিপ্ত। তারপরই একটা দমকা হাওয়া, সব কিছু ওলোটপালোট।
সুপ্রিম কোর্টে(Supreme Court) দায়ের হয় এই মামলা। নির্দোষ খালাস হয়ে যায় সেই দুই পুলিশকর্তা। একটা ঝড় বয়ে যায় মাথুরার শরীর ও মনে। সেই ঝড় আসলে তাঁর শরীর ভেদ করে গোটা দেশের সকল নাগরিকদের ছু্ঁয়ে গিয়েছিল। কিশোরীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল গোটা দেশ। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গর্জে উঠেছিল গোটা দেশে। নারী সুরক্ষা গোষ্ঠী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ নেমেছিল পথে। কিন্তু, সেই সব এখন অতীত। মানুষ ভুলে গিয়েছে সেই প্রতিবাদের কথা, মানুষ ভুলে গিয়েছে সেই মাথুরার কথা।
আরও পড়ুন….যাদবপুরে শিরোনামহীন! প্রথমবার ভারতে কনসার্ট করার সুযোগ এই বাংলাদেশী ব্যান্ড-এর
আরও পড়ুন….প্রতিদিনের মতো দুয়ারে আজও অপেক্ষারত বিদিশার বাবা! মেয়ে যে ‘না ফেরার দেশে’ মানছেন না তিনি
উল্লেখ্য, সেই দম ফাটানো প্রতিবাদের কিছু বছর পর বিয়ে করে নেন মাথুরা। দুই সন্তান ও স্বামী সহ চলে যান দূর দিগন্ত ধরে। সমাজের আদালতকে থেকে নিজেকে রক্ষা করতে নিজের নাম পরিবর্তন করেন। বর্তমানে তিনি একা। তার আর কেউ নেই। সময়ের ছাপ লেগে যাওয়া হলুদ বাড়িটিতে একলা দিন গুজরান। মাস গেলে ১০০০ টাকা বিধবা ভাতা আর এদিক-ওদিক কাজ করে রোজগার করা টাকাতেই চালান নিজের একার সংসার।