ঝাড়ুর বাতাসে উড়ল ডান-বাম! রাজনীতির উজ্জ্বল নক্ষত্র কেজরিওয়াল

রাজকুমার মণ্ডল, কলকাতা  : অরবিন্দ কেজরিওয়াল ( Arvind Kejriwal  ) । দেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। ঝাড়ুর জোরে সাফ করে দিলেন রাজ্য রাজনীতির তারকাদের। সমাজ গড়তে হলে দুর্নীতি দূর করতে হবে ঝেঁটিয়ে। ঝাড়ুই হাতিয়ার হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। নিজের গড়া দল আম আদমি পার্টি অর্থাৎ আপ। ১৯৬৮ সালের ১৬ আগস্ট হরিয়ানার ভিওয়ানি জেলায় জন্মগ্রহন করেন কেজরিওয়াল। খড়্গপুর আইআইটি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে টাটা স্টিলে যোগ দেন। এরপর সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দিল্লি আয়কর বিভাগের যুগ্ম কমিশনার পদে চাকরি করলেও পদত্যাগ করেন ২০০৬ সালে। চাকরি ছাড়ার পর নিজের ( Arvind Kejriwal  ) প্রাপ্ত পুরস্কারের অর্থ দিয়ে তৈরী করেন বেসরকারি সংগঠন ‘পাবলিক কজ রিসার্চ ফাউন্ডেশন’,২০১২ সালে আম আদমি পার্টি গঠন করেন। বিপুল জনপ্রিয়তার পর ২০১৩ সালে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন। ২০১১ সালে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে প্রবীণ গান্ধীবাদী আন্না হাজারের সঙ্গে ছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।পরবর্তী ক্ষেত্রে গুরু-শিষ্যের মতানৈক্যে ২০১২র ২৬ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে আম আদমি পার্টির ব্যূৎপত্তি।Arvind Kejriwal

আম আদমি পার্টি বা আপ এবং ঝাড়ু। ঝাড়ু সবাইকে সরিয়ে আপকে দিল্লি জয়ের ৯ বছর পরেই ২০২২ সালে পাঞ্জাবও জয় করল। রাজনীতিতে কেজরিওয়ালের রাজনৈতিক দল জন্মের এক বছরের মধ্যেই দিল্লি বিধানসভা ২০১৩ য় ৭০ টি আসনের মধ্যে ৬৯টিতে লড়ে ‘আপ’ পেল বিপুল সমর্থন। ৪০ শতাংশ ভোট, ২৮টি আসন! সাড়ে ৪ শতাংশ ভোট বেশি পেয়ে বিজেপি পেল ৩১ আসন, সাড়ে ১১ শতাংশ ভোট পেয়ে কংগ্রেস ৮টি। কংগ্রেস দলের সমর্থনে আপ সরকার গড়তে সমর্থ হয়।মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেজরিওয়ালের ( Arvind Kejriwal  ) হ্যাটট্রিক ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। পাঁচ বছর রাজত্বের পরেও তৃতীয় দফার নির্বাচন ঠিক যেন দ্বিতীয় দফার জলছবি! কংগ্রেস এবারও আসনহীন। আগেরবারের তুলনায় মাত্র ৫ আসন কম পেল আপ। সংগ্রহে ৬২। বাকি ৮ বিজেপির। তত দিনে প্রতিষ্ঠিত উন্নয়নের ‘দিল্লি মডেল’।Arvind Kejriwal

ঝাড়ু আপকে দিল্লিতে ক্ষমতাসীন করার ৯ বছরের মাথায় ২০২২ সালে পাঞ্জাবও জয় করল। শিক্ষার মতোই নজর স্বাস্থ্যব্যবস্থায়। চালু হয়েছে ত্রিস্তর স্বাস্থ্য পরিষেবা। এত দিন ধরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যের দেখভাল করত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এক একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরিতে খরচ অন্তত ৫ কোটি টাকা। গুরুতর রোগীদের সেখান থেকে পাঠানো হতো হাসপাতালে। আপ সরকার ( Arvind Kejriwal  ) এলাকায় এলাকায় তৈরি করে ‘মহল্লা ক্লিনিক’। খরচ ক্লিনিকপ্রতি মাত্র ২০ লাখ টাকা! প্রতিটি ক্লিনিকই অস্থায়ী, কিন্তু শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। সেখানে সর্দি, কাশি, জ্বর, ব্যথা, বেদনা, হাত-পা ভাঙা–জাতীয় সাধারণ চিকিৎসার পাশাপাশি রক্ত, থুতু বা মলমূত্র পরীক্ষার মতো ব্যবস্থা রয়েছে। গুরুতর কিছু হলে সেখান থেকে রোগীদের পাঠানো হয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। আরও গুরুতরদের হাসপাতালে। খরচ পুরোটাই সরকারের।দিল্লিতে এই মুহূর্তে মহল্লা ক্লিনিকের সংখ্যা কমবেশি ২০০।

আরো পড়ুন‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ কপিল দেবকে টপকালেন ঋষভ পন্থ, বিশ্ব তালিকায় সামনে আরো দুজন

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ছাড়া সাধারণ মানুষ ভোগে সরকারি পরিষেবা পেতে। আপ সরকার সেদিকেও নজর দিয়েছে দারুণভাবে। জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, জাত, ধর্ম বা নানা ধরনের সনদ পেতে কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিদ্যুৎ-জলের বিল, সম্পত্তি কর–সংক্রান্ত সমস্যার সুরাহার জন্য আজ আর সরকারি অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রথম দফার শাসনে আপ সরকার এমন ৪০টি পরিষেবা ঘরে বসে পাইয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয় দফায় জুড়েছে আরও ৭০টি পরিষেবা। ঘরে বসে সরকারি পরিষেবা পেতে দরকার একটি ফোন কল। দিল্লির নাগরিকদের সময় ও অর্থের অপচয় কমেছে। বেড়েছে কর্মসংস্থানের বহর। সবচেয়ে বড় কথা, খতম হয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। সরকার আক্ষরিক অর্থেই দুয়ারে। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পাঞ্জাব জয় তাঁকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। কেজরিওয়ালের ( Arvind Kejriwal  ) রাজনৈতিক উত্থান দীর্ঘ মেয়াদে। তিনি পরিবারতন্ত্রে বিস্বাসী নন। আট বছরের শাসনে এতটুকু দুর্নীতির কালি মাখেননি। হাবে-ভাবে-পোশাকে-চালচলনে অত্যন্ত সাধারন। এভাবে দলের বিজয় ধ্বজা উড্ডীন রাখলে? অনেকদূর এগোবেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।




Leave a Reply

Back to top button