স্বাধীনতার ৭৬ বছর পর উত্তরপ্রদেশের এক গ্রামে জল পৌঁছে দিলেন জেলাশাসক, তারপরেই পেলেন বদলির নির্দেশ
এই গ্রামে জলের গতি তো দূর অস্ত একটা জলের ফোটাও ট্যাপ কল থেকে পড়ে না। এমন পরিস্থিতিতে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে এই জেলাশাসক হয়ে আসেন 2013 সালের আইএস ব্যাচের অফিসার দিব্যা মিত্তল। এসেই সাধারণ মানুষের পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে জল পৌঁছানোর উদ্যোগ নেয় তিনি।

শুভঙ্কর, উত্তরপ্রদেশ: আজকে যার বয়স ৭৬ তিনি এত দিনের জীবনকালে ট্যাপ কল থেকে জল পড়তে দেখেননি। গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি ঝর্ণা থেকে জল বয়ে আনতেন। প্রতিজনে বড় পাত্রে ১৫ থেকে ২০ লিটার জল ভরে আনতেন। দরকার পড়লে আবার ছুটতে হত সেই ঝর্ণাতে। তবে আগস্ট মাসের ৩০ তারিখে ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটে এই গ্রামে। প্রথমবার ট্যাপ কল থেকে জল পড়তে দেখেন গ্রামবাসীরা। আর এই জন্য তারা ধন্যবাদ জানাচ্ছেন সেখানকার জেলাশাসক দিব্যা মিত্তলকে। সম্প্রতি সেখান থেকে তার ট্রান্সফার হয়ে যাওয়াতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে দেশ জুড়ে।
‘মির্জাপুর’ ওয়েব সিরিজের দৌলতে ভারতের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশের এই জেলার নাম। পূর্ব উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুর জেলার লাহুরিয়া দাহ। আধা-শুষ্ক পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত একটা গ্রাম। দেশের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন জলের লাইন পৌঁছে গিয়েছে। সেখানে বাসিন্দাদের অভিযোগ জলের গতি অনেক কম। এই গ্রামে জলের গতি তো দূর অস্ত একটা জলের ফোটাও ট্যাপ কল থেকে পড়ে না। এমন পরিস্থিতিতে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে এই জেলাশাসক হয়ে আসেন 2013 সালের আইএস ব্যাচের অফিসার দিব্যা মিত্তল। এসেই সাধারণ মানুষের পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে জল পৌঁছানোর উদ্যোগ নেয় তিনি। অবশেষে গত মাসের ৩০ তারিখে সেই ‘অভিযান’ সফল হয়। ট্যাপ কল থেকে প্রথম জলের মুখ দেখে এই গ্রামের মানুষরা। জেলাশাসক নিজে উপস্থিত থেকে ‘জল’র মাধ্যমে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।এরপরেই বাঁধে বিপত্তি বিজেপি শাসিত এই রাজ্যের স্থানীয় বিজেপি নেতা বিপুল সিং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে অভিযোগ জানান এই প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় স্থানীয় কোনও নেতা এবং প্রশাসনকে জানানো হয়নি।
এরপরেই দায়িত্ব নেওয়ার নয় মাসের মধ্যে স্বাধীনতার পরে এই গ্রামে জল এনে দেওয়া জেলাশাসককে বদলি করে দেওয়া হয় বিস্তৃতি জেলায়। তা নিয়েই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এক গ্রামবাসী এই প্রসঙ্গে বলেন, “ আমাদের সাত প্রজন্ম পার হয়ে গিয়েছে এই গ্রামে জল আসেনি। এরপর ম্যাডাম এখানে বদলি হয়ে আসার পর নিজে জল নিতে গিয়ে দেখেন ফোঁটা ফোঁটা জল পরছে। তখন তিনি ভাবেন এই গ্রামের বাসিন্দারা তাহলে কত কষ্ট করছে। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যত দ্রুত সম্ভব জলের ব্যবস্থা করবেন”। আর একজন বলেন, “ উনার বদলির খবর শুনে আমরা সবাই এতটাই দুঃখিত যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমাদের ঘরে খাওয়া দাওয়াও ভালো করে হচ্ছে না”। গ্রামের প্রধান কৌশলেন্দ্রকুমার গুপ্তা বলেন, “ আমরা এখন আজাদীকা অমৃত মহৎ উৎসব পালন করছি কিন্তু এখানে জল আসেনি। সরকার অন্যান্য পরিষেবা দিতে পারছে না। আমার দাবি থাকবে যত দ্রুত সম্ভব যা দেওয়া সম্ভব সেগুলো চালু করা হোক। ডিএম ম্যাডাম এখানে ‘হিমাচল’ মা রুপে এসেছিলেন। তিনি অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর কাজ করেছেন”।