কলকাতায় ভগৎ সিংকে লুকিয়ে রাখেন সুশীলা, টিকিও ছুঁতে পারেনি ব্রিটিশ পুলিশ, চেনেন এই স্বাধীনতা সংগ্রামীকে?
১৯২৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর। পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট জেমস সন্ডার্সকে গুলি করে হত্যা করলেন ভগৎ সিং এবং শিবরাম রাজগুরু। গোটা ভারত উত্তাল।

Independence Day Story: ১৯২৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর। পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট জেমস সন্ডার্সকে গুলি করে হত্যা করলেন ভগৎ সিং এবং শিবরাম রাজগুরু। গোটা ভারত উত্তাল। ভগৎ সিংকে পাগলা কুকুরের মতো খুঁজছে ব্রিটিশ পুলিশ। ভগৎ ততক্ষণে চুপিসাড়ে কলকাতায়। তাঁকে লুকিয়ে রাখার সমস্ত বন্দোবস্ত করলেন এক বাঙালি নারী। তিনি সুশীলা দিদি। সে যাত্রায় ভগতের টিকিও ছুঁতে পারেনি পুলিশ।
নাম সুশীলা মোহন হলেও ‘সুশীলা দিদি’ নামেই তিনি অধিক পরিচিত। বিশেষ করে বিপ্লবীদের কাছে। সে এক আগুনঝরা সময়। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কাঁপছে দেশ। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলছে বাঙালি তরুণরা। গড়ে উঠছে ‘অনুশীলন সমিতি’, ‘যুগান্তর’। উত্তাল সেই দশকে পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন সুশীলা মোহন। ১৯০৫ সালের ৫ মার্চ। জন্মমুহূর্তেই বোধহয় ঠিক হয়ে গিয়েছিল, এই মেয়ে দেশমাতৃকার শৃঙ্খল মোচন করবে।
এমন অনেকেই আছেন, ইতিহাসের ফুটনোটেও যাঁদের জায়গা হয়নি। কিন্তু তাঁরা না থাকলে স্বাধীনতার ইতিহাস অন্যরকম হত। সুশীলা দিদি সেরকমই একজন। ছাত্র অবস্থাতেই জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে যোগ দেন। জড়িয়ে পড়েন স্বাধীনতা আন্দোলনে। মেয়ের কাজকর্মে বাবার প্রবল আপত্তি ছিল। প্রতিবাদে বাড়ি ছাড়েন। ঝাঁপিয়ে পড়েন দেশের কাজে। পরে অবশ্য মত বদলান বাবা। সুশীলা মোহনও বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু বিপ্লবী কর্মকাণ্ড থামাননি। কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলায় লড়ার জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিজের হাত থেকে সোনার চুড়ি খুলে দিয়েছিলেন সুশীলা।
বেশ কিছুদিন কলকাতাতেও ছিলেন। সেই সময়েই স্যান্ডার্স হত্যাকান্ড এবং ভগৎ সিংয়ের আত্মগোপন। নেপথ্যে সুশীলা। তিনিই ভগৎ সিংকে আত্মগোপনের সমস্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। ভগৎ তাঁকে ‘দিদি’ বলে ডাকতেন। সেই থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে তিনি সুশীলা দিদি। সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে প্রতিবাদ আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন সুশীলা।
একটা সময় হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্ব দেন সুশীলা। পরবর্তীকালে যোগ দেন জাতীয় কংগ্রেসে। দিল্লি অধিবেশনে অংশ নেওয়ায় তাঁকে গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিশ। ১৯৩৩ সালে শ্যাম মোহনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শ্যামও ছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্য, পেশায় আইনজীবী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দিল্লিতে বাস করতেন। কিছুদিনের জন্য দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের সদস্যও হন। ১৯৬৩ সালের ১৩ জানুয়ারি মৃত্যু হয় তাঁর। দেশ হারায় তাঁর প্রিয় সন্তানকে।