ফাঁপা প্রতিশ্রুতি! যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে পড়ুয়াদের উদ্ধারে ব্যর্থ মোদী সরকার

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের(Russia-Ukraine Conflict) ভয়বহতা এখনও তরতাজা সদ্য ইউক্রেন থেকে দেশে ফেরা ডাক্তারি ছাত্রী অঞ্ছল শর্মার মুখে। ২৫ বছরের ওই ছাত্রী গত শনিবার দেশে ফিরেছেন। ওই ছাত্রীর বাড়ি হরিয়ানার পঞ্চকুলা শহরে। ইউক্রেন থেকে সাথে এনেছেন একরাশ ভয়াবহতা আর একটি কম্বল। 

কিয়েভ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির ষষ্ঠ বর্ষের ছাত্রী ছিলেন তিনি। ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ (The Indian Express) কে সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, মাত্র ৬ মাসের মধ্যে তাঁর মেডিক্যাল কোর্স শেষ হতো। কিন্তু পড়া অসম্পূর্ণ রেখেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরলেন তিনি (Russia-Ukraine Conflict) । 

দিনটি ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি। ইউক্রেনের (Russia-Ukraine Conflict) ভয়াবহতা বুঝতে পারলেন ইউক্রেনে মেডিক্যাল পড়তে যাওয়া ছাত্রী অঞ্ছল শর্মা । তিনি জানান, ‘আমি তখন ভারত সরকারের সব গাইডলাইন মেনে চলি। কিন্তু একটা সময় আসে যখন রাজধানী কিয়েভ থেকে প্রাণ হাতে বেরনো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ভারত সরকার এর তরফে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বলা হয় নিজেরা যেকোনো উপায়ে যেন ইউক্রেনের পশ্চিমের দিকে চলে আসে’। 

২৮ ফেব্রুয়ারি অঞ্ছল ও তার কয়েক বন্ধু স্থানীয় স্টেশনে পৌঁছান ‘লিভ’(Livv) এর উদ্দেশ্যে। তিনি জানান, ‘ কিন্তু ট্রেনে ওঠাও রীতিমত দুস্কর হয়ে পড়ে আমাদের কাছে। কোনও মতে ট্রেনে উঠে ৬.৩০ এ ট্রেন ছাড়লে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিই আমরা। বাঁচা মরার এই লড়াইয়ে আমরা তখন নিজেদের সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে মনে করি। সঙ্গে রাখি একটা জ্যাকেট আর একটা কম্বল’। যুদ্ধের ত্রাস  (Russia-Ukraine Conflict)  বারবার ফুটে উঠছে ওনার বাচনে। ইউক্রেনে থাকাকালীন নিজের গোছানো ছোট্ট পৃথিবীকে ছেড়ে আসতে হয়েছে প্রানে বাঁচতে। 

ট্রেনে করে ‘লিভ’ পৌঁছানর পর অঞ্ছল পৌঁছান উজহরড(Uzhhorod)। এই স্থানটি ইউক্রেনের পশ্চিমতম স্থান, হাঙ্গেরি (Hungry), পোল্যান্ড (Poland), স্লোভাকিয়া(Slovakia) সীমানার একদম কাছাকাছি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তখন চেষ্টা করি যেকোনো মতে হাঙ্গেরি পৌঁছানর কথা। সেইমত একটা ট্যাক্সি করে পৌছায় হাঙ্গেরি। টানা যাত্রার ধকলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়লেও, নিরাপদ ভেবে মনের মধ্যে একটা অনাবিল শান্তি আর আনন্দ অনুভব করছিলাম’। 

ভারত সরকারের (Indian Government) এহেন পদক্ষেপে হতাশ তারা। তিনি বলেন, ‘শুধু বিমান বাদে যেকোনো উপায়ে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ইউক্রেন ছাড়তে হয়েছে। সরকারের (Indian Government) সাহায্যর আশ্বাস থাকলেও বাস্তবায়নের কোনও চেষ্টা দেখা যায়নি। আমরা নিজেরা কিয়েভ ছেড়েছি, নিজেরা ট্রেন করেছি, নিজেরাই হাঙ্গেরির সীমানা পার করেছি।ভারত সরকারের (Indian Government) থেকে যেরকম আশা করেছিলাম, সেরকম সাহায্যর লেশমাত্র ছিলনা। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে উদ্ধারের যে প্রক্রিয়া, সেটি সম্পূর্ণ করতে দেখা যায়নি।

‘সরকারের (Indian Government) দায়সারা বিজ্ঞপ্তি। বিমানের দুষ্প্রাপ্য টিকিট সব মিলিয়ে যেন এক টানাপড়েনের দৃশ্য। যুদ্ধের আগ্রাসনের ত্রাস সৃষ্টির আগেই সরকারের প্রত্যেক ভারতীয়দের বের করে আনা উচিত ছিল। সরকার কখনোই ভারতীয়দের কড়া ভাবে ইউক্রেন ছাড়ার কথা জানায়নি, যা বেশ হতাশার’ তিনি জানান। 

অঞ্ছল শর্মা রাশিয়া-ইউক্রেন (Russia-Ukraine Conflict) যুদ্ধের এক নিদারুণ বর্ণনা দিয়েছেন। রাশিয়ার আগ্রাসন ইউক্রেনে কিভাবে ধ্বংসের ছবি এঁকেছে তিনি তা বলতে গিয়ে জানান, ‘আমি জীবনে কোনদিন এতো ভয় পায়নি। সাক্ষাত মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছি। আতসবাজির মতো রকেট, বোমা পড়ছে। এ যেন সাক্ষাত মৃত্যুর দ্বার’। 

সাক্ষাত মৃত্যুর মুখ থেকে পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পেরে তিনি অত্যন্ত খুশি। তবে আনন্দের মধ্যেও লুকিয়ে আছে সেই আতঙ্কের ছাপ, আর ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ। তিনি জানান, ‘সত্যিই এই দেশ যতটা সুন্দর ততটাই শান্তির বার্তা বহন করে’। 

আরও পড়ুন দীর্ঘদিন পর বড় পর্দায়,এবার নন্দিতা দাসের পরিচালনায় অভিনয় করবে জনপ্রিয় কমেডিয়ান কপিল শর্মা

আরও পড়ুন Kolkata Book Fair : প্রথম বইমেলায় মাঠের ভাড়া মকুব করা হয়েছিল, জেনে নিন কলকাতা বইমেলার ঐতিহ্যের ইতিহাস




Leave a Reply

Back to top button