Netaji Subhash Chandra Bose : আমি সুভাষ বলছি, একটা কথায় কেঁপে উঠেছিল ভিক্টোরিয়া বাহিনী

প্রত্যুষা সরকার, কলকাতা : সালটা ১৯৪২ । গোটা বিশ্ব জুড়েই চলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ( second World war) । ১৯১৪ – এর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আবারও বিশ্বজুড়ে বেজে উঠেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ( second World war ) দামামা । এদিকে ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আসতে তখনও বেশ কয়েক বছর দেরি । দেশকে স্বাধীন করতে ইতিমধ্যে প্রাণ বলিদান দিয়েছেন একাধিক স্বাধীনতা সংগ্রামী ( freedom fighter ) । আর ঠিক এই সময় রাসবিহারী বসুর তত্ত্বাবধানে তৈরি হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি স্বতন্ত্র সেনাবাহিনী দল ।
নেতাজীর অনুপ্রেরণায় ভারতীয় জাতীয়তাবাদীরা গঠন হল “আজাদ হিন্দ ফৌজ” ( Azad Hind fouz)। ১৯৪২ সালে সিঙ্গাপুর ( Singapore ) পতনের অব্যবহিত পরেই রাসবিহারী বসু আজাদ হিন্দ ফৌজ- এর ভার তুলে দেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ( Netaji Subhash Chandra Bose) হাতে। নেতাজির নেতৃত্বে আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে ওই বাহিনী। এরপর ভারতবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উজ্জীবিত করার জন্য শুরু হয় একটি বেতার মাধ্যম যার নাম ছিল “আজাদ হিন্দ রেডিও” ( Azad Hind radio ) ।
Netaji Subhash Chandra Bose – আজাদ হিন্দ রেডিও গঠন
১৯৪২ সালের ২৭ জানুয়ারি ভারতবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উজ্জীবিত করতে চালু হয় বেতার প্রচার মাধ্যম। যার নেতৃত্বে ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ( Netaji Subhash Chandra Bose) । “আজাদ হিন্দ ফৌজ” দ্বারা পরিচালিত এই বেতার মাধ্যমের নাম ছিল “আজাদ হিন্দ রেডিও”। ‘ আজাদ হিন্দ রেডিও’ চালু হবার পর লোকের এটিকে বলতো – ফ্রী ইন্ডিয়া রেডিও সম্প্রচার। প্রথমে এর সম্প্রচার শুরু হয় জার্মানিতে। কিন্তু পরবর্তীকালে যুদ্ধ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শুরু হয় যুদ্ধ পরিস্থিতি। এবং নেতাজিও গমন করেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। ফলে বেতার মাধ্যমের সদরদপ্তর প্রথমে সিঙ্গাপুর ও পরে রেঙ্গুনে স্থানান্তরিত হয়। তবে জার্মানিতেও এর একটি সদরদপ্তর উপস্থিত ছিল। যার দায়িত্ব ছিলো নাম্বিয়া – এর উপর।
Netaji Subhash Chandra Bose – আজাদ হিন্দ রেডিও সম্প্রচার এর ভাষা
জার্মানি ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে আজাদ হিন্দ বেতার কেন্দ্র থেকে বেশ কয়েকটি ভাষায় সাপ্তাহিক বেতার প্রচার করা হত।ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য সার্বিক সম্ভাব্য স্বেচ্ছাসেবকদের ভাষা ছিল ইংরেজি, হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, পাঞ্জাবি, তামিল, পাশতুন এবং উর্দু। প্রত্যেক সপ্তাহে ভাষাগুলির মাধ্যমে সম্প্রচারিত হত সাপ্তাহিক বুলেটিন। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে আজাদ হিন্দ রেডিও-র জনপ্রিয়তা।
আরও পড়ুন- https://thebengalichronicle.com/netaji-subhash-chandra-bose-throwback-to-his-picture-and-quote/
Netaji Subhash Chandra Bose – আজাদ হিন্দ রেডিওর জন্য অ্যান্টি ইন্ডিয়া রেডিও
আজাদ হিন্দ রেডিওর জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথেই দেশের মানুষের মধ্যে আরো প্রবলভাবে উজ্জীবিত হচ্ছিল দেশকে স্বাধীন করার চেষ্টা। আর এতেই ঘাবড়ে গিয়েছিল ইংরেজ সরকার। তখন ইংরেজ সরকারের বেতার প্রচার চলত অল ইন্ডিয়া রেডিও ( AIR ) – এর মাধ্যমে। আজাদ হিন্দ রেডিও সম্প্রচারে ঘাবড়ে গিয়ে অল ইন্ডিয়া রেডিও নাম বদলে অ্যান্টি ইন্ডিয়া রেডিও ( Anti India Redio ) রেখেছিল ইংরেজ সরকার ।
Netaji Subhash Chandra Bose – আজাদ হিন্দ রেডিওতে নেতাজির বক্তব্য
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ভারতের স্বাধীনতার লড়াই তখনও শেষ হয়নি। চারিদিকে শোনা যাচ্ছে গোলা- বারুদ এর আওয়াজ। এরইমধ্যে ১৯৪২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রেডিও কাঁপিয়ে ভেসে এলো গম্ভীর একটা কণ্ঠস্বর। শোনা গেল রেডিওর ওপাশ থেকে কেউ বলছে , ” দিস ইজ সুভাষচন্দ্র বোস স্পিকিং টু ইউ ওভার আজাদ হিন্দ রেডিও”। সেই কণ্ঠস্বরে ( Netaji Subhash Chandra Bose) কেঁপে উঠেছিল গোটা ভারতবর্ষ। গর্জে উঠেছিল ভারতবাসীর বুকের রক্ত।
আরও পড়ুন- https://thebengalichronicle.com/netaji-subhash-chandra-bose-biopics/
আজ নেতাজীর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীতে মনে করিয়ে দেয় সেই কণ্ঠস্বরের প্রভাব। আর ওই তীব্র কথাই সেদিন আর একধাপ এগিয়ে দিয়েছিল ভারতবর্ষের স্বাধীনতাকে। নেতাজী সেদিনও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র অস্ত্র দিয়েই যুদ্ধ জেতা যায় না তার জন্য দরকার হয় রণকৌশল। সেদিনের অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকদেরও চাপে ফেলে দিয়েছিলেন বাঙালি এক যুবক, আমাদের দেশ নায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।