ভারত মাতা কি জয় আজকে বহুবার শুনেছেন এমন কি হয়তো বলেছেনও, কিন্তু জানেন কোথা থেকে উৎপত্তি হয়েছে এই শ্লোগানের?
ভারত মাতা” ধারণাটি ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের মনে গেঁথে যায় বলে মনে করা হয়। “ভারত মাতা”কে আদি-ভারতী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

শুভঙ্কর, নয়াদিল্লি: ‘ভারত মাতা কি জয়’। আজকে স্বাধীনতা দিবস। প্রত্যেকের মুখে মুখে এই স্লোগান ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধু আজকে নয়। সারা বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন পরিস্থিতিতে এই স্লোগান শোনা যায়। তবে এই স্লোগানকে নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। কোথা থেকে উৎপত্তি হয়ে এই স্লোগানের? বিভিন্ন বিবরণ থেকে জানা যায় “ভারত মাতা” এই শব্দটির উৎপত্তি বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী কিরণ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি নাটক থেকে। যা 1873 সালে প্রথম অভিনয় করা হয়।
কিরণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ওই নাটকে ১৯৭০ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষকে তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখানো হয় একজন গৃহিণী ও তার স্বামী জঙ্গলে পালিয়ে যায়। সেই সময় বিদ্রোহী দলেদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তারা। সেখান থেকে এক পুরোহিত তাদের ভারত মাতা দেখানোর জন্য একটি মন্দিরে নিয়ে যান। সেখান থেকে মনোবল সংগ্রহ করে তারা একটা বিদ্রোহকে নেতৃত্ব দেন এবং সেই বিদ্রোহে ব্রিটিশ বাহিনীর পরাজয় ঘটে। এখান থেকে, “ভারত মাতা” ধারণাটি ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের মনে গেঁথে যায় বলে মনে করা হয়। আমরা ভারত মাতা হিসেবে যে ছবিটি এখন দেখি সেটা বিংশ শতাব্দীর শুরু হবার সময় থেকে জাতীয়তাবাদী পাবলিকেশন্স গুলো এই চিত্র দেখাতে থাকে। ভারত মাতা ছবিতে আমরা দেখতে পাই একজন শাড়ি পরিহিত নারী তার মাথায় মুকুট, ও পিছনে সিংহ রয়েছে। সাহস এবং বীরত্বের প্রতীক হিসাবে সিংহ “মা”-য়ের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের উট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক টিজি ফিওরিটোর 2012 সালে প্রকাশিত থিসিস বলা হয়েছে “ব্রিটিশরা ভারতের ঔপনিবেশিক ভূ-প্রকৃতির মাধ্যমে ভারতের কার্টোগ্রাফিক আকৃতি তৈরি করেছিল, তারপরে তা ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা ভারতের একটি নতুন সাংস্কৃতিক চিত্র তৈরি হয়”। লেখক মধু কিশওয়ার প্রতিষ্ঠিত ‘মানুশি’ পত্রিকার একটি প্রতিবেদন 1866 সালে বেনামে প্রকাশিত হয় । যা ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের লেখা। ‘উনবিমসা পুরাণ’ বা “উনিশতম পুরাণ” শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে ব্যঙ্গাত্মক অংশে “ভারত মাতা” এর মূর্তিটি একটা ধারনা পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে “ভারত মাতা” কে আদি-ভারতী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ১৯২০ সালে ভারত মাতার বিষয়টিকে আরো দৃঢ়তার সঙ্গে সবার সামনে নিয়ে আসার ফলে ভারতীয় রাজনীতিতে এক বিশাল প্রভাব পড়ে। গান্ধীজী ভগৎ সিং এর বিভিন্ন লেখা থেকে এই বিষয়ে জানা গেছে। অন্যদিকে 1936 সালে, শিব প্রসাদ গুপ্ত দ্বারা বেনারসে একটি ভারত মাতার মন্দির নির্মিত হয়। যা স্বয়ং মহাত্মা গান্ধী উদ্বোধন করেন।এই মন্দিরে কোনও দেবতা বা দেবীর মূর্তি নেই। জানা যায় এখানে মার্বেল দ্বারা সেট করা ভারতের একটি মানচিত্র রয়েছে।