দেশজুড়ে হই-হুল্লোড়ে পালিত হল শিবাজী জয়ন্তী, উৎসবের মাহাত্ম্য মাতোয়ারা দেশবাসী

চারিদিকে আলোর রোশনাই, রঙের ছটা- কারণ পালিত হল ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ জয়ন্তী (Shivaji Jayanti 2022)। মারাঠা সম্প্রদায়ের আজ এক বিশেষ উৎসব। ১৯ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ জয়ন্তী ( Shivaji Jayanti 2022))। এবছর মহারাজের ৩৯২ তম জন্মদিন উদযাপন হচ্ছে। শিবাজি ছিলেন একজন মারাঠা যোদ্ধা ও মারাঠা রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ১৬৩০ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারি পুনের শিবনেরি দুর্গে জন্মগ্রহণ করেন। সেই কারণে এই দিনটি পালিত হয় ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ জয়ন্তী (Shivaji Jayanti 2022) হিসেবে।

ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ (Chhatrapati Shivaji) ছিলেন ভারতের অন্যতম সাহসী, প্রগতিশীল এবং বিচক্ষণ শাসক। তিনি মারাঠা রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি তার সাহসিকতা ও কৌশলের জন্য পরিচিত ছিলেন। এই সাহস ও কৌশল তাকে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করেছিল। তাঁর লড়াইয়ের কাহিনি ইতিহাসের প্রতিটি  পাতায় বর্ণিত আছে। 

শিবাজী মহারাজই প্রথম ব্যক্তি যিনি তার মারাঠা বাহিনীর মাধ্যমে গেরিলা যুদ্ধের কৌশল প্রবর্তন করেছিলেন। মায়ালস কোঙ্কন এবং দেশ অঞ্চলের মারাঠা প্রধানদের একত্রিত করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। শিবাজী মহারাজ (Chhatrapati Shivaji) তাঁর সময়ের ভাষা ফার্সিকে বাদ দিয়ে আদালত ও প্রশাসনে মারাঠি ও সংস্কৃতের মতো আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার করে প্রচার  করেছিলেন। তাঁর অবদানের কথা বর্ণিত আছে ইতিহাসের প্রতিটি পাতায়। 

শিবাজী ছিলেন ভারতের প্রথম শাসক যিনি স্বরাজ্যে সুরাজ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি মৌলিক বিপ্লব। শিবাজী ছিলেন মানবতার একজন শক্তিশালী রক্ষক। তিনি সকল ধর্মকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করতেন। কিন্তু হিন্দুত্বের ওপর হামলা কখনোই বরদাস্ত করা হয়নি। তার রাজ্যে রাষ্ট্রদ্রোহ, যেকোনো ধরনের দুর্নীতি, অর্থের অপচয় ইত্যাদির ওপর তার কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছিল। পরিস্থিতি বোঝার কৌশল ছিল শিবাজীর। শিবাজি তাঁর জীবদ্দশায় প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ইতিহাস বলে যে তিনি শূন্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। একটি ছোট জাতের শক্তিতে একটি বড় রাজ্যের পথ প্রশস্ত করেছিল। শিবাজি উত্তর থেকে দক্ষিণে তার বিজয় পতাকা উত্তোলনে সফল হয়েছিলেন।

শিবাজি শুধু যুদ্ধেই দক্ষ ছিলেন না, তিনি একটি দক্ষ শাসন ব্যবস্থাও গড়ে তুলেছিলেন। রাজস্ব, কৃষি, শিল্প ইত্যাদির সর্বোত্তম ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছেন। শিবাজীর রাজত্বকালে কোন প্রকার তুষ্ট করা হয়নি। শিবাজি একজন দক্ষ শাসক এবং আলোকিত সম্রাট হিসেবে পরিচিত। শুক্রাচার্য ও কৌটিল্যকে আদর্শ মনে করে বহুবার তিনি কূটনীতির আশ্রয় নেন। অষ্টপ্রধান নামে আটজন মন্ত্রীর মন্ত্রী পরিষদ ছিল তাঁর। এতে মন্ত্রীদের প্রধানকে পেশওয়া বলা হতো। তিনি একজন নিষ্ঠাবান হিন্দু ছিলেন এবং তিনি ধর্মীয়ভাবেও সহনশীল ছিলেন। তিনি বেশ কয়েকটি মসজিদ নির্মাণেও সহায়তা করেছিলেন এবং তাঁর সেনাবাহিনীতে মুসলিম সৈন্য ছিলেন। তিনি একজন ভালো জেনারেলের পাশাপাশি একজন ভালো কূটনীতিকও ছিলেন।

শিবাজীর বিস্তৃত দৃষ্টি ছিল। শিবাজীর শাসনামলে অপরাধীদের অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হতো, কিন্তু প্রমাণিত হওয়ার পর। শিবাজীর রাজ্যাভিষেকের পরই প্রকৃত অর্থে স্বরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। শিবাজী হিন্দু সমাজে দাসত্ব ও হতাশার বোধ নিয়ে বেঁচে থাকার চেতনার অবসান ঘটিয়েছিলেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে শিবাজীর জীবন চরিত্র থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বহু মানুষ ভারতের স্বাধীনতার জন্য শরীর, মন ও ধন ত্যাগ করেছিলেন।

শিবাজীর জীবন বীরত্বপূর্ণ, মহৎ ও আদর্শ জীবন। নতুন প্রজন্মকে শিবাজীর জীবনী পড়তে হবে। এতে তাদের জীবনে অবশ্যই নতুন শক্তি ও উদ্দীপনার পরিবেশ তৈরি হবে এবং হতাশার অনুভূতি চলে যাবে।

আরও পড়ুন জলকেলিতে মত্ত অভিনেত্রী, স্বল্প পোশাকে উষ্ণতা ছড়াচ্ছেন ‘জগদম্বা’ ওরফে রোশনি

আরও পড়ুন সেনায় যোগদানে মাঝরাতেই অনুশীলন, হবু আর্মির একনিষ্ঠতায় মজেছে নেটপাড়া




Leave a Reply

Back to top button