সুদূর অতীতেও ছিল বিজ্ঞাপনের বহর! সেলেব্রিটি হিসাবে দেখা মিলেছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের

বিজ্ঞাপন ( Advertisement) মানেই ছোট ছবির বড় দাবি। প্রোডাক্ট বিক্রির পাশাপাশি দর্শককে প্রভাবিত করার অসীম ক্ষমতা রয়েছে বিজ্ঞাপনের। আর ঠিক সেই কারণেই ভারতের বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলি অভিনবত্ব সৃষ্টি করেছে তাদের বিজ্ঞাপনে বহু বছর ধরেই। বর্তমানে টেলিভিশন, প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াও বিজ্ঞাপনী প্রচারের একটি বড় প্ল্যাটফর্ম। তবে আজ এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করবো বেশ পুরোনো অথচ উল্লেখযোগ্য কিছু ভারতীয় বিজ্ঞাপন নিয়ে যেগুলির বিজ্ঞাপনী ভাষা এবং কৌশল সমকালীন সময়ে যথেষ্ট অভিনব এবং প্রভাবশালী ছিল।
১৯৭৯ সালে ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্র (Bank of Maharastra) বেশ অভিনব একটি বিজ্ঞাপন ( Advertisement)তৈরী করেছিল তাদের নিজস্ব স্কিম বিক্তির উদ্দেশ্যে। সেখানে একটি হরস্কোপ বা রাশিচক্রের আদলে ছক কাটা ছিল। বিজ্ঞাপনের বয়ানে বলা ছিল যে ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্রের স্কিম গ্রহণ করলে গ্রাহকের গ্রহ নক্ষত্র সঠিক পথে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে চলবে। ১৯৮০ সালে মাথাপিছু পঞ্চাশ টাকায় স্বচ্ছন্দে কাশ্মীর ভ্রমনের (Kashmir Tourism) বিজ্ঞাপন যথেষ্ট আকর্ষিত করেছিল ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের। এমনকি পঞ্চাশ টাকার মধ্যেই আইস স্কেটিং, স্কিইং, হাউস বোটে চড়ার মতো লোভনীয় অফার গ্রহন করতে পারতেন পর্যটকরা।
কুসংস্কার চিরকালই বিজ্ঞাপনের অন্যতম হাতিয়ার। আর ‘short people live short lives’ এই কুসংস্কারকে হাতিয়ার করেই এক বিজ্ঞাপন সংস্থা লম্বা হবার ওষুধের বিজ্ঞাপন ( Advertisement)আনে বাজারে। তবে সেই তথাকথিত বৈজ্ঞানিক ওষুধের প্রভাবে লম্বা হবার পাশাপাশি আয়ুও বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা তা তো ১৯৭৫ সালে এই ওষুধ সেবন করা কোন গ্রাহকের থেকেই প্রকৃতপক্ষে জানা সম্ভব।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) বরাবরের মতোই ১৯২২ এর ভারতীয় ইতিহাসের পটভূমিকাতেও যথেষ্ট জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব। আর জনপ্রিয় মুখ বিজ্ঞাপনের অন্যতম ইউএসপি এ সত্য চিরকালীন। তাইজন্যই ১৯২২ সালে গোদরেজ কোম্পানি তাদের দেশীয় সাবানের বিজ্ঞাপনে( Advertisement)ব্যবহার করে স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম এবং ছবি। উপরন্তু রবি ঠাকুরের বয়ানেই লেখা হয়েছিল বিজ্ঞাপনের মূল বয়ান। যথারীতি গোদরেজ (Godrej) কোম্পানির এই কৌশল সাফল্য লাভ করেছিল প্রোডাক্ট বিক্রির ক্ষেত্রে।
সাবানের বিজ্ঞাপনে একাধিক সংস্থা সময়ের সাথে সাথে অভিনবত্বের নজির রেখেছে তাদের বিজ্ঞাপনে। ২০২১ এর পটভুমিতে দাঁড়িয়ে মডেলদের নগ্ন ছবি সাবানের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা এমন কিছু বিস্ময়কর ঘটনা নয়। তবে ১৯৭২ এ এই ঘটনা সত্যিই ছিল ছকভাঙা। সিন্থল (cinthol) কোম্পানি তাদের সাবানের বিজ্ঞাপনে উপস্থিত করেন একজন মডেলের নগ্ন ছবি যা যথেষ্ট আলোড়ন ফেলেছিল সেই সময়ে।
আদর্শ গৃহবধূর সংজ্ঞা ২০২১ এ সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে ১৯৭২ এর তুলনায়। সেই সময়ে বাড়ির মায়েদের সেলাইয়ের কাজ জানাটা বিশেষ কোন স্কিল নয় বরং আবশ্যিক হিসেবেই মনে করা হতো। ঊষা সেলাই মেশিন (Usha Sewing Machine) কোম্পানি বাড়ির বউদের এই গুণকেই হাতিয়ার করে বানায় তাদের সেলাই মেশিনের বিজ্ঞাপন। এর বয়ানে বলা ছিল ঊষা সেলাই মেশিন চালাতে শেখালেই সম্পন্ন হবে আদর্শ গৃহবধূর ট্রেনিং। বলা বাহুল্য আজকের দিনে এই বিজ্ঞাপন এলে তা নারীর সম্মানের পরিপন্থী হিসেবেই মনে করা হতো।
প্রসঙ্গত, বর্তমান কালেও বিজ্ঞাপনের কোনো অংশে কমতি নেই। খবরের কাগজের পাতা থেকে টিভি এমনকি হাতে থাকা স্মার্টফোনেও বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। তবে বিজ্ঞাপনের ধরনে যে আমূল পরিবর্তন এসেছে সেটা এই বিজ্ঞাপনী গুলি দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যায়।